২০২২ সালের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিবছর এই দিনে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে গতবারের মতো এবারও উৎসব ছাড়াই বই দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেবে।
জানা গেছে, এবারের শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যপুস্তক বিনা মূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
এর মধ্যে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠ্যপুস্তক ও ৫টি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় মুদ্রিত পাঠ্যপুস্তকও রয়েছে। তবে এ বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় একেকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ভাগ করে বিভিন্ন দিনে বই দেওয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসির ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরই ‘পাঠ্যপুস্তক উৎসব’ উদ্বোধন করেন।
এদিকে ২০১২ সাল থেকে বর্তমান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিচ্ছে। এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সারাদেশে একযোগে বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারির উপস্থিতিতে উৎসবমুখর ও আনন্দঘন পরিবেশে বই বিতরণ উদযাপিত হয়ে আসছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২০২১ সালে বই উৎসবকে কেন্দ্র করে বর্ণিলভাবে সাজানো হলেও বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাধ্যমে, সফলভাবে পহেলা জানুয়ারি ৯ কোটি ৩৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৩টি বই পৌঁছে দিয়েছে।
২০২২ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৩০টি, প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ৬৬ লাখ ৫ হাজার ৪৮০টি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪ টিসহ মোট ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪টি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক-পঠন-পাঠন সামগ্রীর মধ্যে আমার বই এবং অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হবে ৩৩ লাখ ২ হাজার ৭৪০টি।
অন্যদিকে জেলা-উপজেলা ও থানার জন্য ৫১২টি উপজেলা ও থানায় বাংলা ভার্সনে এবং ৫৬টি জেলায় ইংরেজি ভার্সনের বই বরাদ্দ করা হবে। প্রথম শ্রেণিতে মোট ১ কোটি ২৪৯৬ হাজার ৪৯৪টি পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ৫১২টি উপজেলা ও থানায় ১ কোটি ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৯টি, ইংরেজি ভার্সনে ৫৬ টি জেলায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৫টি বই বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে মোট ১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ১ কোটি ২০ লাখ ২৩ হাজার ৭৮০ এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২৯টি। তৃতীয় শ্রেণিতে মোট ২ কোটি ৩৬ লাখ ৫ হাজার ১৮৬টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪৮টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ২ লাখ ৫ হাজার ৮৩৮টি। চতুর্থ শ্রেণিতে মোট ২ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার ৯৯৭টি বইয়ের মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৮ হাজার ৭৬৭টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩০টি বই বিতরণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ২ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৫২৩টির মধ্যে বাংলা ভার্সনে ২ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ১৯৩ টি এবং ইংরেজি ভার্সনে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩০টি।
এছাড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজস্ব বর্ণমালা সম্বলিত মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির পঠন-পাঠন সামগ্রী এবং প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে ৫টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী) শিশুদের মাঝে প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাঠ্যপুস্তক বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শেরপুর, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নঁওগা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, চাঁদপুর, ফেনী, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এই মোট ২০টি জেলায় সরবরাহ করা হবে।