আকবরের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০২১, ০৭:২৬ পিএম
আকবরের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি

চট্টগ্রামের জিওসি মোড় ফ্লাইওভারের নিচ থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী আকবর খান মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তার এই রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্মারকলিপি দিয়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ইমদাদুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমদ, প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল, রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম মোস্তফা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীবৃন্দ গত ২৭ আগস্ট ১২তম ব্যাচের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী আকবর পুরান ঢাকার মেস থেকে বেরিয়ে যায় এবং তার সহপাঠীরা বিভিন্ন সময় ফোনে যোগাযোগ করলে আশেপাশে অবস্থান করছে বলে জানায়। সর্বশেষ রাতে যখন আকবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তখন সে একটু পর বাসায় ফিরবে বলে তার বড় বোনকে জানায়। অতপর রাত ৮টা ৫৩ মিনিটের দিকে জানা যায় আকবর চট্টগ্রামের একটি ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে যায় এবং প্রতক্ষ্যদর্শীরা ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞান ও আহত অবস্থায় আকবরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

চিকিৎসাধীন ডক্টর ও পুলিশের তদন্ত ও প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে এটি স্পষ্টত হয় যে, এটি কোনো আত্মহত্যা কিংবা দুর্ঘটনার কেস নয়। কারণ, আকবরকে অজ্ঞান, অসুস্থ অবস্থায় ফ্লাইওভার থেকে ফেলে দেওয়া হয় বলে সূত্রমতে জানা যায়। এমনি আরও অনেক সূত্র পুলিশের কাছে রয়েছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় আকবরের পরিবার একটি মামলাও করেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকবরের অবস্থা ছিল খুবই আশঙ্কাজনক এবং পরবর্তীতে ১ সেপ্টেম্বর ভোরে ৪টা ৫০মিনিটে আকবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আরও বলা হয়েছে, আমরা খুবই হৃদয়বিদারক ও ব্যথিত কণ্ঠের বলতে চাই, আমাদের সহপাঠীর সঙ্গে খুব অন্যায় হয়েছে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আকবরকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের একজন সহপাঠীর এমন রহস্যজনক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটাই জানাতে চাচ্ছি, আমাদের সহপাঠী আকবর হত্যার দ্রুত সঠিক তদন্ত ও দোষীদের বিচার না হলে অনতিবিলম্বে আমরা মানববন্ধনসহ ও প্রয়োজনে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাওয়া সিদ্ধান্তে উপনিত হব।

স্মারকলিপি জমা দেওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই বিষয়টি আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখব। আকবার বলে যে শিক্ষার্থী মারা গেছে তার মৃত্যু তদন্ত সুষ্ঠুভাবে করতে সার্বিক সহযোগিতা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন করবে।

ইমদাদুল হক আরও বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে নির্দেশ দিয়েছি যেন তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করেন।

এদিকে জবির ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শোক প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ তার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। জবি পরিবার মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।

এর আগে গত শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরীর জিওসি এলাকায় আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন আকবর। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বুধবার ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকবর খানের মৃত্যু হয়।

Link copied!