“আত্মীয়-স্বজনরা আমার জন্য এতদিন যা করতে পারেনি, তা সাংবাদিকরা করেছে। আমি খুবই খুশি। আমার বিপদে সাংবাদিকরা পাশে দাঁড়িয়েছে। আমি কোনদিন এত দূরে আসতে পারতাম না, আমার চিকিৎসা ও মেশিন (অক্সিজেন কনসেনট্রেটর) কিনতে পারতাম না। আমাদের শেষ আশ্রয় সাংবাদিকরা। আল্লাহ আপনাদের (সাংবাদিক) ভালো করুক।”
শনিবার (২০ মে) সকাল সাড়ে ১০টার সময় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন অক্সিজেনের পাইপ নাকে নিয়ে রিকশা চালানো মাইনুরজ্জামান সেন্টু। তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন।
মাইনুরজ্জামান সেন্টু বলেন, “আমি আগের থেকে অনেক ভালো আছি। আল্লাহর রহমতে আমার ভালো চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাক্তাররা। আমার আরও চারটি পরীক্ষা দিয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট দুই-তিনদের মধ্যে পেয়ে যাব। এরপরে রিপোর্টগুলো ডাক্তাররা দেখবে। তেমন কোনো সমস্যা না হলে মঙ্গল বা বুধবার ছুটি পেতে পারি।”
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামীম আহমেদ রামেক হাসপাতালে গিয়ে সেন্টুর সঙ্গে কথা বলে তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। এসময় তিনি সেন্টুর যাবতীয় চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। একই সঙ্গে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। এছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সেন্টুর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তার ঘোষণা দেন। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর কেনার জন্য অর্থিকভাবে সহায়তা করেন এমপিপুত্র ও সমাজসেবক ফারাজ করিম চৌধুরী। এছাড়াও তাকে অনেকে সহায়তা করেছেন।
এর আগে নাকে অক্সিজেনের পাইপ নিয়ে রিকশা চালানো সেন্টুর নিউজ ও ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি ব্যাপক ভাইরাল হয়।
মাইনুরজ্জামান সেন্টু রাজশাহী নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা। তার বয়স ৫৫ বছর। দীর্ঘ সাত বছর ধরে ফুসফুসের সমস্যার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছেন। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তবে তাদের সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা আলাদা আলাদা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তাই এ বয়সে চরম অসুস্থ শরীর নিয়েও রিকশা চালিয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় সেন্টুকে।
রামেক হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. নিশাদ জামি বলেন, “সেন্টুকে প্রায় সব চিকিৎসকই চেনেন। কারণ তিনি এর আগেও মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা তার চিকিৎসা দিচ্ছি। এখন তিনি আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো আছেন।”