কুমিল্লায় গত বছর দুর্গাপূজার মণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর জেলায় মোট ১২টি মামলা করা হয়। এক বছরের মধ্যেই এসব মামলার বেশির ভাগ তদন্ত শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এদিকে বছর ঘুরে শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের অভিজ্ঞতা ভুলে এবার কুমিল্লায় আরও জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা উদ্যাপন করা হবে।
গত বছর দুর্গোৎসবের সময় ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার নানুয়া দিঘির পাড়ের দর্পণ সংঘ পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়ায়। কুমিল্লাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এর প্রভাব পড়ে। ঘটনার মূল হোতা ইকবালসহ অনলাইনে উসকানি ছড়ানোর দায়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় মোট ১২টি মামলা হয়। এসব মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও থানা-পুলিশ।
সিআইডির কাছে থাকা ছয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটির অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা সিআইডির প্রধান। একটি মামলা প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সিআইডির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকির হোসেন জানান, তাদের কাছে তদন্তে থাকা ছয়টি মামলার মধ্যে পাঁচটিরই অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। একটি মামলায় ধারা পরিবর্তন করায় প্রশাসনিক অনুমোদনের প্রয়োজন, তাই চার্জশিট দাখিল করতে বিলম্ব হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন চাওয়া হয়েছে, পেলে সঙ্গে সঙ্গে চার্জশিট দেওয়া হবে। চার্জশিটে ১০৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
পিবিআইয়ের হাতে থাকা চারটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় একজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটি মামলার তদন্তও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে সন্ত্রাস ও নাশকতা দমন আইনে জেলা পুলিশের তদন্তে থাকা দুটি মামলাও প্রশাসনিক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. আবদুল মান্নান।
আবদুল মান্নান বলেন, পূজামণ্ডপ-কাণ্ডে দায়ের করা দুটি বড় মামলার তদন্ত করেছে জেলা পুলিশ। এই দুটি মামলার তদন্ত শেষ। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেই চার্জশিট দিতে পারবেন।
এদিকে এ বছরও নানুয়া দিঘির পাড়ের মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, গত বছরের সহিংসতার কথা মাথায় রেখে এ বছর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল বলেন, এ বছর কুমিল্লায় ৭৯৪টি মণ্ডপে পূজা হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় সুশৃঙ্খলভাবেই পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাশ টিটু বলেন, তারা গত বছরের অভিজ্ঞতার কথা ভুলে সর্বজনীনভাবেই এ বছর দুর্গোৎসব উদ্যাপন করবেন।
কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, নানুয়া দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে এবার আরও জাঁকজমকভাবে পূজা হবে। সেখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার রেখে উৎসবমুখর পরিবেশের ব্যবস্থা করা হবে।