• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হাওরে ফের বন্যার শঙ্কা, ঝুঁকিতে ফসল


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২২, ১২:১১ পিএম
হাওরে ফের বন্যার শঙ্কা, ঝুঁকিতে ফসল

টানা বৃদ্ধির পর গত কয়েক দিনে সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে শঙ্কা কাটেনি এখনো। আগামী ৭২ ঘণ্টায় নদীর পানি ফের বাড়তে পারে। নামতে পারে পাহাড়ি ঢল। এমন তথ্য জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমা, সীমান্ত নদী যাদুকাটা ও পুরাতন সুরমাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও ভারত আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে পাউবো জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ভারতের মেঘালয় ও আসাম প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরের ফসলকে ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।

এছাড়া সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দেশের হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে নেমে আসা পানির ঢল ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলো দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে নদীর পানি বিপৎসীমা টপকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরগুলোতে আসতে পারে। সেখানকার বোরো ধান এখনো আধা পাকা অবস্থায় থাকায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, হাওর এলাকার নদ-নদীর মধ্যে সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, যাদুকাটা, লুভাছড়া, সারি, গোয়াইন, ধলাগাং, পিয়াইন, ঝালুখালি, সোমেশ্বরী, ডুগাই, ধনু ও বাউলাই নদীর পানির কোনো কোনো স্থানে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে যেতে পারে। এসব নদ-নদীর পাশে মোট ৯৫টি হাওর ও ১০টি বিল রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, গত চার দিন ধরে নদ-নদীর পানি কমছে। প্রতিটি নদীতেই পানি কমেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আগামী ৭২ ঘণ্টায় মেঘালয় ও আসামে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, ২০১৭ সালের পর সুনামগঞ্জে অকাল বন্যা হয়নি। তাই নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলতে পেরেছেন। এবার ২০১৭ সালের মতো অসময়ে নেমেছে উজানের ঢল। এতে ঝুঁকিতে পড়ে হাওরের ধান। গত তিন-চার দিনে ঢলের চাপ কিছুটা কমে আসায় তারা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু এখন এলাকায় খবর রটে গেছে যে আবার ঢল নামবে।

এদিকে সুনামগঞ্জে আবার পানিতে তলিয়েছে অন্তত ১০টি হাওর। বাঁধে ফাটল ধরায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে আরও ১০টি হাওরের ফসল। বিপুল ফসলহানিতে হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হাহাকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসাবে, গত ৮ দিনে জেলার প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০ হাজার টন উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাওর নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর হিসাবে, হাওরে পানি ঢুকে তলিয়েছে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয় জানায়, এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ টন।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, গত শনিবার পর্যন্ত জেলায় ১৪টি হাওরের ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলহানি ঘটেছে দিরাই উপজেলায়। এ উপজেলার ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধর্মপাশায় ৯৬৫ হেক্টর, শাল্লায় ২০০ হেক্টর, সদরে ১০০ হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ২০ হেক্টর, তাহিরপুরে ৮৫ হেক্টর এবং ছাতক উপজেলায় ৩০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে।

তিনি জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৪৬৭ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, যা মোট আবাদের মাত্র ০.৮৯ শতাংশ।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!