সোনারগাঁয়ের মায়াদ্বীপে জেলে ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ করার উদ্দেশ্যে স্কুল শিক্ষকের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই শিক্ষক পরিবারের ৫ জন মারাত্মক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষকের ভাই আহত মো. শরিফ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।
নুনেরটেকের টেক পাড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে আবুল হাশেমের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সশস্ত্র বাহিনী শনিবার গভীর রাতে সোনারগাঁয়ের ‘মায়াদ্বীপ শিশু পাঠশালা’র শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখির বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণের চেইনসহ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র ও কিলঘুষি এবং ক্ষুরের আঘাতে মরিয়ম আক্তার পাখি (২৪), তার বৃদ্ধ মা নাছিমা বেগম (৫০), তার ভাই রাশেদ (২০), শরীফ (২২) ও পাখির দেড় বছরের কন্যা শিশু পারিশা মারাত্মকভাবে আহত হন। এসময় চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে সন্ত্রাসীরা চলে যায়। পরে আশপাশের মানুষ তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহত শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখি বলেন, “মায়াদ্বীপ শিশু পাঠশালায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে স্কুলটি বন্ধ করতে আবুল হাশেম প্রতিনিয়ত আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি, ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। মায়াদ্বীপের এ স্কুলটি তাদের মাদক কারবার, অনৈতিক কাজ ও অবৈধ বালু উত্তোলনে প্রধান অন্তরায় হওয়ায় শুরু থেকেই হাশেম ও সন্ত্রাসী বাহিনী এ স্কুলটি নিশ্চিহ্ন করতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তাদের বাধায় নতি স্বীকার না করায় গতকাল (শনিবার) রাতে আমার ও আমার পরিবারের ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়েছে। তাদের হাত থেকে আমার দেড় বছরের কোলের শিশুটিও রক্ষা পায়নি।”
সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কবি শাহেদ কায়েস বলেন, “নুনেরটেকে বালুসন্ত্রাস, হুন্ডি ব্যবসা ও মাদকের সঙ্গে জড়িত আবুল হাশেম ও বাহিনীর সব ধরনের ব্যবসার বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘মায়াদ্বীপ শিশু পাঠশালা’। ২০০৭ সালে এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নদীবেষ্টিত এ চরাঞ্চলে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দেখতে পাই। তাদের অবৈধ ও অনৈতিক কাজে বিশেষ করে বালুসন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াই আমি। এসবের প্রতিবাদ করায় আমি ৩ বার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হই। আমার ওপর সব শেষ হামলা চালায় ২০১৩ সালে। তখন আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করলে হাশেমসহ ৭ জন নানা মেয়াদে কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে আসে। স্কুলটি বন্ধ করে দিতে পারলে আমি আর মায়াদ্বীপে যাবো না এবং তারা নিশ্চিন্তে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাবে। এ কারণে তারা শিক্ষক ও তাদের পরিবারকে হামলা চালাচ্ছে, তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।”
দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অবৈতনিক বিদ্যালয়টি চালু রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন শাহেদ কায়েস। একই সঙ্গে তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।