বগুড়ার সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলে মানুষের কাছে প্রিয় বাহন হয়ে উঠছে মোটরসাইকেলে যোগাযোগ। এক চর থেকে অন্য চরে ছুটে চলছে এ বাহন। এতে দ্রুততম যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে চরের অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মোটরসাইকেল ভাড়া কাজে ব্যবহার করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সারিয়াকান্দি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চর রয়েছে। সারিয়াকান্দি সদরের আংশিক ছাড়াও হাটশেরপুর, চালুয়াবাড়ী, কাজলা, কর্ণিবাড়ী ও বোহাইল ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় চর এলাকা হিসেবে পরিচিত। পরিসংখ্যান অফিসের হিসাব মতে ওই সব ইউনিয়নে প্রায় ১শ ২২টি চর গ্রাম রয়েছে। চর গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ। এসব মানুষ কৃষিকাজ করে জীবনজীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তবে শুষ্ক মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একেবারে নাজুক অবস্থায় পরেন তারা।
স্থানীয়রা আরো জানান, এক চর থেকে অন্য চরে যেতে পাড়ি দিতে হয় বালুময় পথ। পায়ে হেঁটে পথ চলতে যেখানে দুর্বিসহ অবস্থা, সেখানে যুবকদের মোটরসাইকেল চালানো কঠিন ব্যাপার। চরের যুবকেরা ভাড়ায় চালিয়ে থাকেন এসব মটরসাইকেল। নৌকা থেকে নেমেই পাওয়া যায়, ওইসব যুবকদের। এক চর থেকে অন্য চরে যাত্রী নিয়ে ছুটে চলেন তারা। উঁচু-নিচু, ঢালু, খানাখন্দ, জমির আইল, ধু-ধু বালু চরে বালুময় পথ ছাড়াও অনেক স্থানে খালের মতো নদীনালা পাড়ি দিয়ে ছুটে চলেন তারা চর গ্রামের নির্দিষ্ট গন্তব্যে। একেক জন মোটরসাইকেল চালক ভাড়ায় যাত্রী তুলেন ২/৩ জন করে।
চরের মোটরসাইকেল চালক যুবকরা জানান, চরে এরকম মোটরসাইকেল চলা শুরু হয় আর্শ্বিন মাসের প্রথম থেকে। এটা চলে বর্ষার আগ পর্যন্ত।
মোটরসাইকেল চালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, “সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে দৈনিক ১৩শ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়ে থাকে। খরচ বাদে হাজার থেকে ১১শ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে তার। এতে ভালোই চলে সংসার।”
নান্দিনা চরের আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, “চরে মোটরসাইকেল চলছে ৩/৪ বছর হলো। এতে আমাদের সময় সাশ্রয় হচ্ছে। অনেকেই মোটরসাইকেলে ২-৩ মণ পরিমাণ পণ্য পরিবহন করছেন। এজন্য আমাদের কাছে এখন এটি জনপ্রিয় বাহন।”
কর্ণিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলী মণ্ডল বলেন, “আমার ইউনিয়নে কর্মপক্ষে ৮০-৯০টি মোটরসাইকেল চলে প্রতিদিন। এছাড়াও সারিয়াকান্দির পুরো চরাঞ্চলজুড়ে প্রায় ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ মোটরসাইকেল দৈনিক ভাড়ায় চলে।”
উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. নাঈম হোসেন বলেন, “চরে ভাড়ায় মোটরসাইকেল পাওয়া যায়— এটা অবিশ্বাস্য হলেও এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। দৈনন্দিন মোটরসাইকেল চালিয়ে চরের অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়াও সময় ও দূরত্ব কমে এসেছে।”