কর্মস্থল থেকে চার দিনের ছুটি পেয়েছেন। কথা ছিলো বেতন পেলে মা ও ছোট বোনকে দেখতে বাড়িতে আসবেন। বাড়িতে ঠিকই আসলেন সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমান, কিন্তু কাফনের কাপর পড়ে লাশ হয়ে।
সোমবার (৬ জুন) সকালে হাবিবুরের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি তার গ্রামের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের দক্ষিণ বলিয়া গ্রামে এসে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মা হোসনে আরা বেগম ছেলের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার পরিবারে চলছে শোকের মাতন।
কান্না জড়িত কণ্ঠে হাবিবুরের মা হোসনে আরা বেগম বলেন, “শনিবার সকালেও ফোনে কথা কইছি হাবিবের সাথে। হাবিব জিগাইছে মাগো কী খাইছো, নাস্তা করছো কী করো? আমি কইছি বাবা আমি নাস্তা করছি, আমার মাইয়ারে পড়াইতে লইছি। তহন হাবিব কইলো ওরে মাইরো না মা, ওরে আমি ডাক্তারি পড়ামু। ওর জন্য একটু কষ্ট করো তোমার ওরে নিয়া চিন্তা করা লাগবে না। দুপুরেও আমার সাথে ঘণ্টা খানেক কথা হইছে। তখন কইছে মাগো আমি বাড়িতে আমু। বেতন পাইলে বাড়িত আমু আমারে চার দিনের ছুটি দিছে। দুই দিন আইতে-যাইতে যাইবো আর দুই দিন তোমাগো লগে থাকমু। আর তো কিছু কইলো না বাবায়। এই ছিলো আমার বাবার সাথে শেষ কথা আর আমার বাবার মুখের কথা শুনতে পারলাম না।”
পরে নামাজের জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের একটি দল নিহতের নামাজের জানাযায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি পরিবারকে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২৩ বছর আগে বাবা সাহাবুদ্দিন মিয়া মারা যাওয়ার পর হাবিবুর মায়ের সাথে নানা বাড়ি দক্ষিণ দিঘলদীর বালিয়া গ্রামের থাকতেন। ২০১৫ সালে সে সীতাকুণ্ডের বিএন কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি হয় তার। আগামী কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়া কাথা ছিলো তার। কিন্তু সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে দুর্ঘটনার দিন শনিবারই তিনি নিহত হন।
এদিকে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ওই ডিপোতে কর্মরত ভোলার আরও দুই শ্রমিক দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। এরা হলে চরফ্যাশন উপজেলার নীল কমল ইউনিয়নের চর যমুনা গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. সাদেক সর্দারের ছেলে মো. কবির। অপরজন লালমোহন উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বগীর চর গ্রামের মো. দুলাল পঞ্চায়েতের ছেলে মো. সোহেল। কবির ওই ডিপোর শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আর সোহেল ডিপোর কাভার্ড ভ্যান চালক।