২০০৪ সাল, বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে জনগণের দাবি আদায়ে রাজপথে ব্যস্ত জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে ২১ আগস্ট দলীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস বিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ চলছিলো। বিকেলের সমাবেশ দুপুরের পরপরই কানায় কানায় ভরে ওঠে। লোকে লোকারণ্য সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী একটি মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ভাষণ শেষও হয়ে গিয়েছিলো। ঠিক সে সময় গ্রেনেডের বিকট আওয়াজে চারপাশ কেঁপে ওঠে। নেতাকর্মীরা প্রথম দিকে এটিকে ককটেল হামলা ভাবলেও তাদের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে একের পর এক ফুটতে থাকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্রেনেড। দলীয় নেতাকর্মীদের মানব দেওয়াল ও ট্রাকের পাশের গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় সেদিন আওয়ামী লীগ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে যান। তবে নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ তাৎক্ষণিক প্রাণ হারান ১৯ জন এবং আহত হন অসংখ্য নেতাকর্মী। তাদেরই একজন ঢাকার কেরানীগঞ্জের সন্তান ও তৎকালীন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বিপ্লব।
ঘটনার দিন অস্থায়ী মঞ্চ ট্রাকের পেছনের ডালা ধরে দাঁড়িয়ে ভাষণ শুনছিলেন। হামলার প্রথম গ্রেনেডের আঘাতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে গ্রেনেডের শব্দে তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেও তিনি যা দেখলেন তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। যেদিকে চোখ যায় শুধু আহত-নিহতদের রক্তে ভেজা শরীর। সমাবেশে অংশ নেওয়া লোকজন আহত-নিহতদের ওপর দিয়ে দৌড়াচ্ছেন। যার যার মত নিরাপদ গন্তব্যে যেতে চাচ্ছেন।
বিপ্লব জানান, প্রথম গ্রেনেডের আঘাতেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে আরেকটি গ্রেনেডের শব্দে জ্ঞান ফিরে পেয়ে দেখেন, চারপাশে রক্তমাখা শরীর। সবাই এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছেন। এলাকাটিতে কোনো যানবাহন না থাকায় মানুষ কাঁধে এবং কোলে করে আহত-নিহতদের হাসপাতালে ও নিরাপদ আশ্রয়ে নিচ্ছিলো।
সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে বিপ্লব বলেন, “আমি বহু কষ্টে পাশের একটি দোকানে গিয়ে উঠলেও পুলিশ আতঙ্কে আমাকে দোতালার একটি দর্জি দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এক দর্জি আমার পরনের প্যান্টটি কেটে দেন এবং রক্তে ভেজা জুতা জোড়া খুলে দেন। এ সময় আমি সবকিছু দেখলেও কথা বলতে পারছিলাম না। আমি সেখানে থাকতে থাকতে ঘটনাস্থলে আরও ১০/১৫টি গ্রেনেড হামলা হয়।”
বিপ্লব আরও বলেন, “পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে আমাকে এক লোক জানান, নিচে গাড়ি আসছে আমাদের জন্য। অতঃপর তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল সাহেবের গাড়িতে করে আমাকেসহ ৯ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার আগেই কানে আওয়াজ আসতে শুরু করে আহতদের হাসপাতাল থেকেই আটক করা হবে।”
সেই রক্তাক্ত সময়ের বর্ণনা দিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, “সেখানে সামান্য চিকিৎসা শেষে আমাকে গোপনে নিয়ে ভর্তি করা হয় পুরান ঢাকার আরাফাত হাসপাতালে। সেখানেও অ্যারেস্ট আতঙ্কে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় আমার এক সহকর্মীর বাসায়। সেখান থেকে সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে ১০ দিন পর ভারতে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে দুই পায়ে অপারেশন করে যতগুলো স্প্রিন্টার বের করা সম্ভব হয়েছে তা বের করা হয়। মাংস ও হাড়ের সঙ্গে লেগে যাওয়া স্প্রিন্টারগুলো বের করা সম্ভব নয় বলে জানান চিকিৎসকরা। এখনো অসংখ্য স্প্রিন্টার দুই পায়ে রয়েছে।
বিপ্লব বর্তমানে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এখন ওষুধ খেয়ে মোটামুটি ভালো থাকলেও মাঝে মাঝেই প্রচণ্ড ব্যথার দুই পা প্রায় অবশ হয়ে যায় তার। দেখতে ভালো মনে হলেও ভালো নেই বঙ্গবন্ধু ও তার দল আওয়ামী লীগ পাগল এই নেতা। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বেঁচে আছেন এতেই খুশি তিনি।