• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

যুদ্ধে অংশ নিয়েও তালিকায় নাম নেই মুক্তিযোদ্ধার


জামালপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৭:০১ পিএম
যুদ্ধে অংশ নিয়েও তালিকায় নাম নেই মুক্তিযোদ্ধার

“আমি অশিক্ষিত মানুষ চোখে দেখি না গায়ের শক্তিও কমে গেছে, খুব কষ্টে আছি। মুক্তিযোদ্ধার সকল প্রমাণাদি থাকলেও টাকা ও লোকের অভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় আমার নাম ওঠেনি। মরার আগে আমার একটাই আকুতি, আমি যেন আমার প্রাপ্য বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব নিয়ে মরতে পারি।”

এভাবেই নিজের মুখে অনবরত কথাগুলো বলেছেন ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের রণাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলী মণ্ডল ওরফে সুরুজ আলী দেওয়ান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলীর বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের আগপয়লা গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত মোবারক আলী। সে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ২০ বছরের এক টগবগে যুবক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেদিন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে কয়েকজন যুবক সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারমধ্যে তিনি একজন।

সরেজমিন গিয়ে কথা হয় এই সুবিধাবঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ আলী দেওয়ানের সঙ্গে। এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের বিভিন্ন বিভৎস্য ঘটনা তুলে ধরেন।

সুরুজ আলী ১৯৭১ সালে ১ মে প্রশিক্ষণ নিতে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ কালাইপাড় যান। সেখানে ১১নং সেক্টরে কর্নেল তাহেরের অধীনে কোম্পানি কমান্ডার আবু আলমের কাছে গ্রেনেড ও ৩০৩ রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ধানুয়া কামালপুর, কুড়িগ্রাম জেলাধীন রৌমারী, গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ঘাঁটি করে সেখান থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিনোদটঙ্গী দিয়ে এসে মেলান্দহে নিজ গ্রামে মাইলমারা নামক স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে অংশ নেন।

এ সময় তার এক সহযোগী মো. হরাই ওরফে সুরুজ নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা পাকহানাদারের বুলেটের আঘাতে শহীদ হন।

দেশ স্বাধীনের পর জীবিকার তাগিদে দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা সুরুজ দেওয়ান স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে এক কর্নেলের বাসা দেখাশোনা করতেন।

প্রায় ৪০ বছর কাটিয়ে নিঃস্ব সুরুজ আলী আবার ফিরে আসেন গ্রাম মাহমুদপুরের আগপয়লায়। সুরুজ আলীর ঘরবাড়ি জমিজমা কিছুই নেই। অনাহারে অর্ধাহারে জীবনযাপন করলেও সরকারি কোনো সহযোগিতা তার ভাগ্যে জোটেনি। আশ্রয়হীন ওই মুক্তিযোদ্ধা অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থাকার পর অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি ঘর বরাদ্দ পায়। তার স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোনোমতে জীবনযাপন করছেন। বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন তারা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব কিসমত পাশা বলেন, “তিনি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ভুলবশত তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়  অন্তর্ভুক্ত হয়নি। জেলাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি করছি।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!