• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মিয়ানমারের অনিচ্ছায় ব্যর্থ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২২, ০৯:১৯ এএম
মিয়ানমারের অনিচ্ছায় ব্যর্থ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

নানা অঘটনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পাঁচ পূর্ণ হলো। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চাপে ধ্বংস করেছে উখিয়া টেকনাফের ১২ হাজার একর বনভূমি। গেল পাঁচ বছরে রোহিঙ্গারা ১৪ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নিপীড়নের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে ব্যাপকহারে বাংলাদেশের প্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংকটকালে কয়েক দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ মিয়ানমারের অনিচ্ছার কারণে ব্যর্থ হয়। পাঁচ বছর পার হলেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক মনে করেন, কিছু চিহ্নিত এনজিও রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আল ইয়াকিন, আরসা, আরএসওসহ বিভিন্ন সংগঠন দলগত ভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে।  

রোহিঙ্গারা আসার পর উখিয়া-টেকনাফসহ কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি ঘটেছে বলে মনে করেন কক্সবাজারের সুশীল সমাজ।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০২ টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ইয়াবা, মানবপাচার ডাকাতি, ছিনতাই বেড়েছে, বদলে গেছে শ্রমবাজার। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রোহিঙ্গারা সরকার, এনজিও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা থেকে খাদ্য এবং নানা ধরণের সহায়তা পাচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গারা কম দামে শ্রম দিলেও তাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা যেহেতু কোনো সহায়তা পায় না সে জন্য শ্রমের টাকাই তাদের মূল উপার্জন।

কক্সবাজার জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফি উল্লাহ আনছারী জানান, শ্রম বাজার স্থানীয়দের হাতছাড়া হওয়ায় চরম অর্থকষ্টে আছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের জন্য সরকারের উচিত বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৪ ধরণের অপরাধে মোট ২ হাজার ৪৩৮ মামলা করা হয়েছে। যেখানে মোট আসামির সংখ্যা ৫ হাজার ২২৬ জন। পাঁচ বছরে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে ১০২ জন নিহত হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ বছরে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬টি। ধর্ষণ মামলা ৮৮টি। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায়ের চেষ্টা মামলা হয়েছে ৩৯টি। এ ৫ বছরের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে একাধিক। যেখানে জোড়া খুন, ৬ খুনের ঘটনাও রয়েছে।

রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, “রোহিঙ্গাদের কারণে অপরাধের মাত্রা সহনীয় পর্যায় অতিক্রম করছে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবি ও কাজ করছেন।”

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা পর্যটন শিল্পের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেহ ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করছে না।

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. সরওয়ার আলম বলেন, “রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের ১২ হাজার একর বনভূমি ধ্বংস করেছে গেল পাঁচ বছরে। যা অর্থ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়।”

Link copied!