• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬
সিলেটে বন্যা

বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা, বিদ্যুৎহীন লাখো মানুষ


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২২, ০১:৫২ পিএম
বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা, বিদ্যুৎহীন লাখো মানুষ

বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই সিলেট বিভাগে বয়ে গেছে কালবৈশাখী। বুধবার (১৮ মে) সন্ধ্যার পর থেকে থেমে থেমে কালবৈশাখী আঘাত হানে বিভাগের নানা জেলায়। এতে কোথাও কোথাও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে সিলেটের অন্তত সাড়ে ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকেছে বন্যার পানি। এছাড়া দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। ফলে জেলার অন্তত সাড়ে ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাখাওয়াত এরশাদ জানিয়েছেন, যেসব বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে, সেগুলোতে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। পানি বাড়ার কারণে নতুন করে আরও বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, “বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জেলার সব বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যে বিদ্যালয়গুলোতে এখনো পানি ওঠেনি, সেগুলোকে প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে কানাইঘাটে ৪২টির মধ্যে ৩৭টি, বিশ্বনাথে ৫১টির মধ্যে ৫টি, জৈন্তাপুরে ৩২টির মধ্যে ১২টি, সদরে ৯৫টির মধ্যে ১৮টি, গোয়াইনঘাটে ৪৮টির মধ্যে ১৮টি ও কোম্পানীগঞ্জে ২৬টির মধ্যে ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ও সিলেট নগরীতে আরও ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বুধবার রাতভর বৃষ্টির পর সিলেট জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এছাড়া ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সিলেট মহানগরীর কয়েকটি ওয়ার্ডের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। পানির নিচে তলিয়ে আছে বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার রাস্তাঘাট।

এসব এলাকার অধিকাংশ বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে আছেন বাসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও শৌচাগারের অভাবে অনেকে তাদের বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে যাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকালে পর্যন্ত সিলেট সদর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। প্লাবিত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বাঁধ, পাকা রাস্তাসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন লোকজন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ওষুধ, জ্বালানি তেলের দোকান পানির নিচে থাকায় এসব উপজেলায় মানবিক বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের বিদ্যুৎব্যবস্থা। জেলার লক্ষাধিক গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। সিলেট নগরীতে অর্ধলক্ষাধিক গ্রাহক এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই দিন ধরে। সিলেটের বরইকান্দি সাব-স্টেশন ও শাহজালাল উপশহরে একটি ফিডার পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এসব স্টেশন পুরো চালু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, “জেলায় ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৮টিতে মানুষ অবস্থান করছে। এছাড়া বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ১৪৯ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবারও বরাদ্দ করা হয়েছে।”

Link copied!