প্রকৃতিতে যেমন পালাবদল এসেছে তেমনি পরিবর্তন এসেছে অনলাইনে অর্ডারের ক্ষেত্রেও। ঈদ বা অন্যান্য উৎসবের সময় মানুষ যেমন জামা-কাপড় কেনার জন্য অনলাইনে অর্ডার দেন তেমনি এখন গ্রীষ্মকালীন নানান ধরনের ফল কেনার হিড়িক পড়েছে।
বরিশালের অনেকেই বিভিন্ন জাতের আম অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বিক্রি করছেন। এ নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনও দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে খুচরা ফল ব্যবসায়ীদের ওপর অনেক প্রভাব পড়েছে।
বছর ঘুরে আবারও এসেছে জ্যৈষ্ঠ মাস। এ মাসে চোখে পড়ে গ্রীষ্মকালীন নানান ধরনের ফলের। প্রতি বছরের মতো এবারও গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলে ছেয়ে গেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন ফলবাজার। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কত। কিছু মানুষ এসেছেন বাজারে ফল কিনতে নয় দাম যাচাই করতে।
সরেজমিন নগরী ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাজারেই গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলের সমারোহ। এসব ফলের মধ্যে রয়েছে লিচু, তরমুজ, আম, জাম, তালের শাঁস ও আনারস ইত্যাদি। এ ছাড়া জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে কাঁঠালও দেখা যাচ্ছে বাজারগুলোতে। এসব ফলের গন্ধ সুবাস ছড়াচ্ছে প্রতিটি বাজারে। গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি ফলের মধ্যে বর্তমানে বাজারে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে লিচু। এছাড়া নগরীর প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়ও ভ্যানে করে মৌসুমি ফল লিচু বিক্রি করছেন অনেকে। এদিকে ফেসবুক পেজগুলিও ফল বিক্রির বিজ্ঞাপনে ভরে গেছে। অনলাইন ফল বিক্রেতার লিচু, তরমুজ, আম, জাম, তালের শাঁস ও আনারসসহ গ্রীষ্মের সব ফলের ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন।
নগরীর অন্যতম বড় ফলের বাজার পোর্ট রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমি ফল বিক্রিতে। তারা মূল দোকানের সামনের অংশে মৌসুমি ফল রেখে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এ বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। এছাড়া গোপাল ভড়, হিমসাগর, লেংড়াসহ বিভিন্ন জাতের আমও শোভা পাচ্ছে ফল দোকান গুলোতে। তবে লিচু পুরোদমে পরিপক্ব হলেও আম মাত্র আসতে শুরু করেছে বাজারে।
বাজারগুলো থেকে কিছুটা কম দামেই ফল বিক্রি হচ্ছে ভ্যানের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে।
ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ফলবাজারের বেশির ভাগ অংশ থাকবে মিষ্টি ও রসালো আমের দখলে।
ফলপট্টি বাজারের ব্যবসায়ী কাজী আলমগীর জানান, এ বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে লিচু। প্রকার ভেদে প্রতি একশ লিচু বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ থেকে তিনশ টাকায়। গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি মনে করছেন ক্রেতারা। তাই অনেক ক্রেতা ফল দামদর করে চলে যান।
কাজী আলমগীর আরও বলেন, “ক্রেতা সংখ্যা কম। এখন নাকি মানুষ জামা কাপড়ের মতো অনলাইনে ফল বিক্রি হয়। এক ক্রেতা আমাকে বলেছেন, বাজারে আসছি ফলের দাম যাচাই করতে কিনতে নয়।”
আমের বেচাকেনা এখনো জমে উঠেনি উল্লেখ করে অপর ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, “লিচুর এখন ভরপুর মৌসুম। তাই লিচুর ব্যবসা জমজমাট। এছাড়া মৌসুমের শেষ দিকে হলেও এখনও বাজারে তরমুজ আছে। ৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। আমের বেচাকেনা জমে উঠবে আগামী সপ্তাহ থেকে।”
অনলাইনে ফল বিক্রির বিষয়ে মনির হোসেন বলেন, “ভালো ফল খেতে হলে আমাদের কাছে আসতে হবে। অনলাইনে ফল বিক্রিতে অনেক সমস্যা আছে। অনেক সময় অনলাইনে যা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় ডেলিভারিতে তা পাওয়া যায় না। আর আমরা ফল ক্রেতার চোখের সামনে রেখে দেই। তারা স্বচক্ষে ভালো ফল কিনে যেতে পারেন।”
নগরীর বটতলা বাজারে ফল কিনতে আসা জহিরুল হক বলেন, “আড়াইশ টাকা দিয়ে একশ বোম্বাই লিচু কিনেছি এ বছর ফলটির বেশ চাহিদা। নগরীর চৌমাথা বাজারে গিয়েও দেখা গেছে বিভিন্ন ধরনের ফলের সমারোহ। এ বাজারে লিচু বিক্রি জমজমাট। এভাবে নগরীর সব এলাকাতেই বসেছে ফলের পসরা। ভালো জাতের এক কেজি আম একশ টাকার বেশি।”
জহিরুল হক আরও বলেন, “বর্তমানে ফেসবুকে আমসহ অন্যান্য গ্রীষ্মকালীন ফলের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বাজার থেকে কেনার পাশাপাশি অনলাইনেও ফল কিনব।”
শহরের বিমানবন্দর থানা এলাকার জাকারিয়া হোসেন বলেন, “গত বছর অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ১০০ কেজি আম কিনেছি। এবারও কিনব। মাঝেমধ্যে বাজার থেকে ফল কিনি। কয়েকদিন আগে বাজারে গিয়ে ছিলাম ফলের দাম যাচাই করতে। কারণ অনলাইনে অনেক ফলের দাম বেশি দেওয়া থাকে।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আরও গত বছর এক ধরনের লিচু অর্ডার করে ছিলাম, পেয়েছি আরেক ধরনের। অনেক সময়ে অনলাইনে এ ধরনের সমস্যা হয়।”
নগরীর হাউজিং এলাকার অনলাইনে ফল বিক্রেতা জাহিদ রাকিব বলেন, “তিন বছর ধরে অনলাইনে গ্রীষ্মকালীন ফল বিক্রি করছি। এবার চারশ মণ আম বিক্রি করব। এখন লিচু বিক্রি করছি। অনেক সময় অর্ডারের ভুল বোঝাবুঝিতে পণ্য ডেলিভারিতে হেরফের হয়।