মা, কাকি, তিনবোন এবং দুই ভাগ্নিসহ অর্পিতা রানী (১৭) যাচ্ছিলেন মহালয়া ধর্মসভায়। ভাগ্যের পরিহাসে নৌকাডুবিতে মাসহ ৫ স্বজনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা অর্পিতা।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মাড়েয়া বামনহাট আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির এ ঘটনাটি ঘটে।
পারিবারিক ভাবে জানা যায়, করতোয়ার ওপারের বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া উৎসবে যাচ্ছিলেন অর্পিতাসহ পরিবারের আরও ৫ সদস্য। এক পর্যায়ে নৌকায় চড়েন তারা। কিন্তু নৌকা অপরপ্রান্তে পৌঁছানোর আগেই তলিয়ে যায় মাঝ নদীতে। এ ঘটনায় মৃত্যুপুরী হয় করতোয়ার পাড়। লাশের সারিতে যুক্ত হয় তার ৫ স্বজন। তবে বড় বোন আলো রানীসহ (২৩) অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরে অর্পিতা। কিন্তু বেঁচে ফিরেও থামছে না তার আহাজারি।
অর্পিতা রানী পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আরাজি শিকারপুর এলাকার হেমন্ত রায়ের মেয়ে। সে স্থানীয় বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অর্পিতাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। শোকের মাতম চলছে বাড়ি জুড়ে। থামছে না কান্নার রোল। সমবেদনা জানাতে এসে নিস্তব্ধ প্রতিবেশীরাও।
অর্পিতার বাবা হেমন্ত রায় জানান, খুব আনন্দ উদ্দীপনা নিয়েই তার স্ত্রী কবিতা রানী (৪০), বড় মেয়ে আলো রানী (২৩), মেঝ মেয়ে অর্পিতা, ছোট মেয়ে শ্যামলী রানী (১১), ছোটভাই বাসুদেবের বউ রুপালি রানী (৩০), বাসুদেবের মেয়ে নন্দিনী (৮) এবং নাতনি জয়া রানী (৪) ও জ্যোতি রানী (১.৫) বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া ধর্মসভার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু নদী পার হতে গিয়ে ম্লান হয়ে যায় সব আনন্দ। নৌকাডুবির ঘটনায় তার দুই মেয়ে এবং ভাতিজি বেঁচে ফিরলেও লাশ হয়ে ফিরেছে ৫ জন। এখনো নিখোঁজ রয়েছে নাতনি জয়া রানী।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, “তদন্ত কমিটির সদস্যরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান এবং মরদেহ উদ্ধার এবং পরিবারকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানে সক্রিয় থাকায় তদন্ত প্রতিবেদনের সময় তিনদিন বাড়ানো হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকর ২০ হাজা টাকা করে দেওয়া হয়েছে।”