• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পশুর পাশাপাশি মানুষের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচারে মা ও নবজাতকের মৃত্যু


নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ৫, ২০২২, ০৭:৩০ পিএম
পশুর পাশাপাশি মানুষের চিকিৎসা, অস্ত্রোপচারে মা ও নবজাতকের মৃত্যু

নেত্রকোনার বারহাট্টায় পশু ডাক্তারের অস্ত্রোপচারের পর সন্তানসহ শরীফা আক্তার (১৯) নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার চন্দ্রপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। শরীফা একই গ্রামের বাক প্রতিবন্ধী হাইছ উদ্দিনের মেয়ে। অভিযুক্ত স্থানীয় চিকিৎসক জীবনপুর গ্রামের আবুল কাশেম পশুর পাশাপাশি বর্তমানে মানুষের চিকিৎসাও করেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শরীফা বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাশ করেছে। গত বছর সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর এলাকায় তার বিয়ে হয়। শরীফার স্বামীর নাম মহসিন মিয়া। সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এলে গত সপ্তাহে চন্দ্রপুরের বাবার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে ঘটনার পর উপস্থিত লোকজন ডাক্তারের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে মারমুখী হয়ে উঠলে কয়েকজন মিলে ডাক্তারকে বাড়ির পেছন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরে যান আবুল কাশেম। তিনি একজন পশু চিকিৎসক। মানুষের চিকিৎসা করা তার ঠিক হয়নি।

ভুক্তভোগীর মা মাফিয়া আক্তার খাতুন বলেন, “সকালে শরীফার প্রসব ব্যথা শুরু হইলে কাশেম ডাক্তাররে খবর দেওয়া হয়। তিনি দেইখা বলেন, সবকিছু স্বাভাবিক আছে কোনো সমস্যা নাই। আমরা নেত্রকোনা নিয়া যাইতে চাইয়েছিলাম। কিন্তু তার কথায় ভরসা পাইয়া আর নেই নাই। আমরা সাধারণ মানুষ। ডাক্তারের কথা মতই সব করছি। পশু ডাক্তারই সিজার করছেন। পরে ওষুধ সেলাইন না থাকায় এগুলা আনতে একজনকে মোহনগঞ্জ পাঠানো হয়। তবে ওষুধ নিয়ে আসার আগেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হইছে।”

শরীফার চাচা গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম বলেন, “আবুল কাশেম একজন পশু চিকিৎসক। তবে মাঝে মাঝে মানুষের চিকিৎসাও করেন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ছাড়াই শরীফার সিজার করছেন। পরে রক্তক্ষরণ শুরু হলে একজনকে ওষুধ আনতে পাঠানো হয় মোহনগঞ্জে। অনেক দূরের পথ। ওষুধ নিয়ে আসতে আসতেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শরীফার মৃত্যু হয়। এদিকে টানা হেঁচড়া করতে গিয়ে সদ্য ভূমিষ্ট হওয়া ছেলে সন্তানেরও মৃত্যু হয়।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য লালন বখত মজুমদার বলেন, “আবুল কাশেমের এসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই। না হলে আরও অনেকেই এভাবে ভুক্তভোগী হবে।”

সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসিম তালুকদার বলেন, “পশুর চিকিৎসক হয়ে মানুষের চিকিৎসা করা, বিশেষ করে সিজার করা তো কাশেমের একেবারেই উচিত হয়নি।” 

বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত পশু চিকিৎসক আবুল কাশেম বলেন, সিজারের পর ওষুধ আনতে পাঠানো হয়েছিল। দূরের পথ, ওষুধ ও সেলাই আনতে দেরি হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।” 

এই চিকিৎসকের দাবি, “শুধু পশু নয়, মানুষের চিকিৎসার সনদও আছে আমার। দীর্ঘ দিন থেকে মানুষের চিকিৎসা করছি।”

মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসর ডা. শাহরিয়ার জাহান ওসমানি বলেন, “সিজার একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এটি এমবিবিএস ছাড়া কারো করার নিয়ম নেই।”

বারহাট্টা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল হক বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।” তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!