অনৈতিক কাজের সময় এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়া পরকীয়া প্রেমিক যুগলকে রাতভর শেকল দিয়ে বেঁধে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (১৩ আগস্ট) দিনব্যাপী পাবনার চাটমোজর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে শুক্রবার (১২ আগস্ট) রাতে নিমাইচড়ার করকোলা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিমাইচরা ইউনিয়নের করকোলা গ্রামের সুমন আলীর স্ত্রী এক সন্তানের জননী শাপলা খাতুনের (২২) সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়নের হঠাৎপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামে ছেলে এক সন্তানের জনক হেলাল উদ্দিনের (২৭) পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। বিভিন্ন সময় তারা একে অপরের সঙ্গে দেখা করতেন ও একান্তে সময় কাটাতেন। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে শাপলার ঘরে প্রবেশ করেন হেলাল। এ সময় এলাকাবাসী টের পেয়ে তাদের আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। পরে গাছের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে সারারাত অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
পরদিন শনিবার সকালে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে নিমাইচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি এবং তার বোন অষ্টমনিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল সালিশি বৈঠক করেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলা সালিশি বৈঠকে প্রেমিক হেলালকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে মুক্ত দেওয়া হয় এবং প্রেমিকা শাপলাকে ফিরে নিতে স্বামী সুমনকে বলা হয়। সুমন প্রথমে রাজি না হলে পরববর্তীতে কাবিননামার ভয় দেখালে রাজি হয়। পরবর্তীতে জরিমানার টাকাও বিভিন্নজনের মাঝে ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যায়।
এ বিষয়ে হেলাল উদ্দিনের বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমার ছেলেকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরিষদের লোকজন ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দিয়েছে। এই টাকা পরিষদের চৌকিদারসহ লোকজনরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে।”
মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে শাপলা খাতুনের স্বামী সুমন আলী কল রিসিভ করেননি। তবে জরিমানার বিষয়টি জানেন না এবং সেই টাকাও তিনি পাননি বলে এলাকাবাসীকে জানিয়েছেন।
নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরজাহান বেগম মুক্তি বলেন, “এলাকার ব্যক্তিবর্গ ও পার্শ্ববর্তী অষ্টমনিষার চেয়ারম্যান আমার বড় বোন সুলতানা জাহান বকুল আপার উপস্থিতিতে তাদের সাংসারিক ও সন্তানদের কথা চিন্তা করে বিষয়টি মিটমাট করে দেওয়া হয়েছে। কারও প্রতি জোর-জুলুম করা হয়নি। তবে রাতে অভিযুক্তদের শেকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন বিষয়টি আমি জানতাম না, পরবর্তীতে জেনেছি। আর জরিমানার বিষয়টিও আমার জানা নেই।”
এ বিষয়ে অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল বলেন, “আমি সালিশের পুরো সময় ছিলাম না। জরুরি কাজে আমি চলে এসেছিলাম। পরবর্তীতে কি হয়েছে আমি জানিনা। নির্যাতনের বিষয়টিও আমি জানতাম না।”
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, “বিষয়টি আমি শুনেছি। রাতে ওই যুগল আটক হলে সকালে স্থানীয়রা বসে সমাধান করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বা জরিমানা হয়েছে কি না আমি জানি না। নির্যাতনের বিষয়টিও আমাদের জানা নেই। কেউ যদি থানায় অভিযোগ দেয়, তাহলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”