প্রায় ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে পদ্মার পারে গড়ে ওঠা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহীতে’। পিছিয়ে থাকা এই শহরটি কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা দেখাচ্ছিল এই আইটি পার্কটিতে। কিন্তু বিশ্বকে পিছিয়ে দেওয়া করোনাভাইরাস বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ শহরেই কর্মসংস্থানের একটা স্বপ্ন দেখাচ্ছে হাই-টেক পার্ক।
পার্কটি ঘিরেই নতুন দিনের সম্ভাবনা দেখছেন রাজশাহীর মানুষ। চোখের সামনেই প্রযুক্তি শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এমন দৃশ্য রাজশাহীবাসীর মনে নতুন দিনের আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে তরুণ পেশাজীবীরা স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীতে থেকেই সম্ভাবনাময় এক উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার।
ফ্রিল্যান্সার আশরাফুল ইসলাম আশা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি একজন ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করছি। কিন্তু এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও করোনার কারণে হাই-টেক পার্কে বসার সুযোগ পাচ্ছি না। তবে আশা করছি, ঈদের পরে চালু হতে পারে আইটি পার্কটি।”
আশরাফুল আরও বলেন, “রাজশাহী কলেজের ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছি। মা ও তিন ভাইবোনের সংসারের হাল ধরতে হয়েছে অনেক আগেই। এই আইটি পার্কটি হওয়ার পর গায়ের খাটুনি কমেছে। তাই পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে স্নাতক পড়া ছোট ভাই একটু স্বস্তি পেয়েছে। মা-ও প্রশান্তি পেয়েছেন। বোনের পড়াশোনাও চলছে। এককথায় বলতে পারি, এটি আমাদের জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।”
আশার ছোট ভাই মেধাবী শিক্ষার্থী আশাদুজ্জামান আরজু সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ভয় পেতাম যে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন শেষে ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়তে হলে ঢাকায় যেতে হবে আর নয়তো ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যাবে না। রাজশাহীতে তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। হাই-টেক পার্ক সেই সুযোগটি করে দিচ্ছে।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক, রাজশাহীর উপপ্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুল কবির সংবাদ প্রকাশকে জানান, পুরো প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং ২টি বেজমেন্টসহ ১০ তলা বিশিষ্ট জয় সিলিকন টাওয়ারের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। করোনার কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এটির উদ্দেশ্য রাজশাহীতে জ্ঞানভিত্তিক আইটি ইন্ডাস্ট্রি ও আইটি উদ্যোক্তাদের সুযোগ সৃষ্টি করা। বিশ্বমানের বিনিয়োগের পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আইটি/আইটিএস প্রতিষ্ঠান এবং ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে পার্কে আকৃষ্ট করা। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা।
প্রকল্প পরিচালক (উপসচিব) এ কে এ এম ফজলুল হক সংবাদ প্রকাশকে জানান, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর এলাকায় ৩০ দশমিক ৬৭ একর জায়গার ওপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে ২টি বেজমেন্টসহ ১০ তলাবিশিষ্ট প্রায় ৩ লাখ বর্গফুটের জয় সিলিকন টাওয়ার। আরও থাকছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম এবং অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স। এ ছাড়া ৬২ হাজার বর্গফুট আয়তনের পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। এই হাই-টেক পার্কে ১৪ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ৩০ জুন, ২০২১ সালে থাকলেও করোনার বাধায় কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে খরচও বাড়ছে।
প্রায় ৩ লাখ বর্গফুটের জয় সিলিকন টাওয়ারসহ ৭টি প্লটে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর অনুকূলে বরাদ্দ প্রদানের সংস্থান রয়েছে। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন ভবনে ইতিমধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে স্পেস বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম মণ্ডল সংবাদ প্রকাশকে বলেন, শুধু রাজশাহী নয়, সারা দেশের জন্য একটি সম্ভাবনার জায়গা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক সহায়তা পেলে এই গ্রিন সিটিতে থেকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে নেবে। এর মাধ্যমেও দেশের ‘ব্রেইন ড্রেন’ রোধও হবে। তবে কিছু শিক্ষার্থী থাকে, যারা লক্ষ্য নির্ধারণ করে বিদেশ গিয়ে ভালো জীবন যাপন করবেন, তারাই শুধু বিদেশ যাবেন। এখানে অনেক বড় একটি অংশের কর্মসংস্থান হবে। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক’ রাজশাহীর জন্য আশীর্বাদ।