দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ নেই।
সোমবার (২৭ জুন) সকাল থেকে যাত্রী ও যানবাহনশূন্য দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা। শনিবার (২৫ জুন) পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় যানবাহন যাচ্ছে পদ্মা সেতু দিয়ে। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমেছে।
এদিকে যানবাহনের চাপ না থাকায় ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের চোখে-মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার সকাল থেকে যানবাহনের অপেক্ষায় বসে থাকছে ফেরি। ঘাট এলাকা একদম ফাঁকা। যানবাহনের চাপ নেই বললেই চলে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই ফেরিতে উঠে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। এছাড়াও ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা কয়েক শ’ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। যে কয়টা খোলা রয়েছে তারা ক্রেতার অভাবে হতাশ হয়ে বসে আছে।
যশোর থেকে ছেড়ে আসা জে আর লাইন পরিবহনের যাত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, “ফেরিঘাট ফাঁকা থাকায় খুবই ভালো লাগছে। কোনো প্রকার অপেক্ষা ছাড়াই সরাসরি ফেরিতে উঠতে পেরেছি। কয়েক দিন আগেও পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরিতে উঠতে হয়েছে।”
সাকুরা পরিবহনের যাত্রী তালহা বিন বলেন, “কি যে ভালো লাগছে, সেটা বলে বোঝাতে পারব না। ঘাটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। কোনো যানজট বা ভোগান্তি নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেও থাকতে হচ্ছে না। আর হয়তো এই রুটে ভোগান্তি থাকবে না।”
কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকচালক কাশেম খান বলেন, “গত সপ্তাহেও দুই দিন অপেক্ষা করে ফেরিতে উঠতে হয়েছে। সারা বছরই আমাদের মতো ট্রাক চালকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে এই ঘাটে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় অনেক গাড়িই সেতু দিয়ে যাতায়াত করছে। যে কারণে এই ঘাটে কোনো যানজট নেই। সরাসরি ফেরিতে উঠতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।”
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পান-সিগারেট বিক্রেতা কুদ্দুস খান বলেন, “সকাল থেকে ঘাটে কোনো গাড়ি নেই। গাড়ি না থাকলে আমাদের বিক্রিও নেই। গাড়ি থাকলে লোকজন থাকে। সে সময় কিছু কেনাবেচা হয়। ঘাট ফাঁকা থাকার কারণে আজ দোকানই খুলিনি।”
কেয়ার হোটেল মালিক সোহেল রানা বলেন, “যাত্রী না থাকার কারণে আমার খাবার হোটেল বন্ধ রেখেছি। হোটেল খুললেই শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য খরচসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা চলে যায়। দিন শেষে দেখা যায়, খরচের টাকাটাও উঠে না। পুরাটাই লোকসান। তাই বন্ধ রেখেছি।”
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, “পদ্মা সেতু চালু করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। সেই সঙ্গে এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ কমেছে। এই ঘাটকে কেন্দ্র করে কয়েক শ’ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। হকার শ্রমিক রয়েছে। যাদের অধিকাংশ নদী ভাঙনের শিকার। ঘাটকে কেন্দ্র করেই তাদের জীবন চলতো। সকাল থেকে ঘাটে যাত্রী না থাকায় অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছে।”
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, “সকাল থেকে ঘাট এলাকা একদম ফাঁকা। গাড়ির অপেক্ষায় আছে প্রতিটি ফেরি। পদ্মা সেতু চালুর ফলে এই রুটে যানবাহনের চাপ কমেছে। ফলে এই রুট ব্যবহারকারীরা কোনো প্রকার ভোগান্তি ছাড়া পদ্মা পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। এই নৌরুটে ছোট-বড় মিলে ২০টি ফেরি চলাচল করছে।”