• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

কুসিক নির্বাচন : কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?


মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২২, ১০:৩৮ এএম
কুসিক নির্বাচন : কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?

কে পাচ্ছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন? আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া তা কেউই জানেন না—এমন তথ্যকে ছাপিয়ে এখন আলোচনায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ১৪ জনের মধ্যে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন নাকি মনোনয়ন পাচ্ছেন ১৪ জনের বাইরের কেউ?

বৃহস্পতিবার (১২ মে) এমন আলোচনাই ছিল শীর্ষ মহলে। ১৪ জনের বাইরের কেউ মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন, এমন তথ্য আছে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহকারী সূত্রগুলোর কাছেও। এ তথ্যটি আরও জোরালো হয়ে এসেছে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৪ জনের বক্তব্য থেকে। সবারই একই কথা, কোনো কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতা কিছুই জানেন না। সবাই বলছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি ছাড়া কুমিল্লার বিষয়ে কেউ কিছু জানেন না। ফলে বিষয়টি নিয়ে শেষ মুহূর্তে চমকই দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কী চমক থাকছে, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শুক্রবার (১৩ মে) বিকাল ৫টা পর্যন্ত।

এদিন বিকেল সাড়ে চারটায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে সব সদস্যের স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ১১ মে বিকেলে শেষ সময় পর্যন্ত মনোনয়ন আবেদন সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন কুমিল্লার ১৪ জন নেতা। যদিও বিভিন্ন সংস্থার মতে ১৫ জন মনোনয়নের আবেদন সংগ্রহ করেছেন। ১১ মে সর্বশেষ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আলোচনায় আসেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সফিকুল ইসলাম শিকদার। পুরো নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ বদলে যায় তখন।

দলীয় মনোনয়ন পেতে আবেদন জমা দিয়েছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমা, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত, কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ওমর ফারুক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের ছেলে ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মাসুদ পারভেজ খান ইমরান, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু, আওয়ামী লীগের দপ্তর উপকমিটির সদস্য মোহাম্মদ শাহজাহান বিপ্লব, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাহাবুবুর রহমান রুবেল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিউর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী ফারুক আহমেদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য জাকির হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র ভট্টাচার্য্য, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি সফিকুর রহমান।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান সাংবাদিকদের বলেন, “যারা মনোনয়নপত্র নিয়েছেন এবং জমা দিয়েছেন তাদের কাগজপত্র মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করবো। ১৩ তারিখ বিকালে সাড়ে ৪টায় গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডেও সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই আমাদের দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন নির্ধারিত হবে।”

এদিকে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানা সীমার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ এবং জমাদানের পর থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে সমীকরণে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। আঞ্জুম সুলতানা সীমার সংসদ সদস্য থেকে স্থানীয় রাজনীতিতে আগ্রহী ও প্রত্যাশী হওয়ার বিষয়টি এখন রাজনৈতিক বোদ্ধাদের চিন্তার বিষয়। আর দলীয় মনোনয়ন পেলে তাকে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচন করতে হবে। এত বড় ছাড় দিয়ে তিনি নির্বাচন করার প্রতি আগ্রহ দেখানোর বিষয়টি এখন ভাবিয়ে তুলেছে রাজনীতিকদের। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি ১৪ মে পদত্যাগের দিনক্ষণ ঠিক করে রেখেছেন।

মনোনয়নের ব্যাপারে আঞ্জুম সুলতানা সীমা এমপি জানান, তিনি কিছুই জানেন না। দলের সভাপতি ছাড়া আসলে কেউ কিছু জানেন না।

এদিকে সদর আসনের সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় উপস্থিত সদস্যদের সমর্থনে একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত আরফানুল হক রিফাত দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। দলের মনোনয়নের ব্যাপারেও তিনিও আশাবাদী। আরফানুল হক রিফাত জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি। দলের সভাপতি ছাড়া আসলে কেউ কিছু জানেন না।

অন্যদিকে অধ্যক্ষ আফজল খান পরিবার থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন তার ছেলে মাসুদ পারভেজ পারভেজ খান ইমরানও। ওই গ্রুপ থেকে একাধিক প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টিও এখন ভোটারদের কাছে আলোচনার বিষয়। এমপি বাহার ও আফজল খান—এই দুটি গ্রুপের নেতা-কর্মীরাই এখন তাদের নিজেদের প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর প্রত্যাশী।

মনোনয়ন চেয়েছেন জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওমর ফারুক। স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজ শহর এবং কেন্দ্রে তার পরিচিতি রয়েছে। অন্যদিকে তিনি আওয়ামী কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

অপর দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমও তফসিল ঘোষণার আগে ও পরে মাঠ গোছানোর চেষ্টা করছেন। দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন কেন্দ্রে। তার সমর্থকরা তানিমের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে প্রত্যাশী। নূর উর রহমান মাহমুদ তানিমও তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে লবিং করছেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা। তিনিও জানান, নেতাদের বাসায় বাসায় গিয়েছেন কিন্তু কেউ স্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না। নেত্রী ছাড়া আসলেই কেউ কিছু জানেন না। তবে তিনি আশাবাদী।

অন্যদিকে মনোনয়ন পেতে আবেদন জমা দিয়েছে কুমিল্লার আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরিচিত শিকদার পরিবারের সদস্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার। তিনিও মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী জানিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আসলেই কেউ কিছু জানেন না।

মনোনয়ন পেতে আগ্রহী শিকদার পরিবারের আরেক সদস্য কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক সফিকুল ইসলাম শিকদার জানান, বৃহস্পতিবার মেঘলা আকাশ ছিল। এমন আবহাওয়ার মতোই মনোনয়নের আবহাওয়া। ধোঁয়াশা লাগছে। কিন্তু যারা অর্থ বিত্তে ও প্রভাবে শক্তিশালী তারাও কিছু জানেন না।

এছাড়া আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য এবং মহানগর আওয়ামী লীগ যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে। নির্বাচন করার প্রত্যাশা নিয়ে তিনি গত ছয় মাস ধরে নগরীতে বিভিন্ন সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করে জানান দিয়েছেন। পোস্টার ফেস্টুনেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মেয়র নির্বাচন করতে চান তিনি। আনিসুর রহমান মিঠু জানান, তার কাছেও কোনো মেসেজ নেই। মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী জানিয়ে বলেন, মনোনয়ন পেলে ভালো, না পেলেও দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করবেন।

আলোচিত এসব নেতা ছাড়া দলীয় মনোনয়ন পেতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে আরও যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তাদের দু‍‍-একজন ছাড়া কাউকে নিয়ে তেমন আলোচনা নেই।

এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গত দুইবারই বিএনপির প্রার্থীর কাছে আওয়ামী লীগের নানাবিধ ষড়যন্ত্রের কারণে হেরেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তাই এবার আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাইবে না দলটি। যে কারণে অনেক হিসেব নিকেশ করেই দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করা হবে জানা যাচ্ছে কেন্দ্র থেকে। আজ ১৩ মে বিকালে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা থেকেই জানা যাবে কে হচ্ছেন এই নির্বাচনে নৌকার মাঝি।

Link copied!