পটুয়াখালীর বাউফলে কালী মন্দিরে কোরআন রেখে পালানোর সময় ইদ্রিছ খান (৪৮) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) গভীর রাতে উপজেলার বগা ইউনিয়নের উত্তর রাজনগর-পালপাড়া সর্বজনীন কালী মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আটক ইদ্রিছের বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নে। তিনি দুমকি উপজেলার আঙারিয়া এলাকার কদমতলা আবাসনে থাকেন। বুধবার বিকেলে পটুয়াখালী থেকে এমভি কামাল খান লঞ্চে উঠে বগা লঞ্চঘাটে নেমে ওই গ্রামে যান বলে জানায় পুলিশ।
এলাকাবাসী জানান, ওই কালী মন্দিরের কাছেই দিলীপ পালের বাড়িতে তিন দিনব্যাপী নামকীর্তন অনুষ্ঠান হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) শেষ দিন হওয়ায় বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতে নামকীর্তন অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে। ইদ্রিছ বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। রাতে কীর্তন অনুষ্ঠানে খাবারও খান। এরপর রাত সাড়ে তিনটার দিকে কীর্তন আঙ্গিনা থেকে ১০০ মিটার দূরে উত্তর রাজনগর পালপাড়া সর্বজনীন কালী-শীতলা মন্দিরে ইদ্রিছ ঢুকে প্রতিমার সামনে ডাবের ওপর কোরআন শরিফ রেখে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় কীর্তনের স্বেচ্ছাসেবকরা মন্দির থেকে তাকে বের হতে দেখে ধরে ফেলেন এবং কোরআন উদ্ধার করেন। এরপর তারা বাউফল থানায় খবর দিলে বৃহস্পতিবার ভোরেই পুলিশ গিয়ে ইদ্রিছ খানকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে হৃদয় পাল (২২), সঞ্জয় পাল (৩৪), সৌরভ পাল (২১), সজল পাল (৩০) ও কার্তিক পাল (৩৫) বলেন, “কীর্তনে অনেক নারী-পুরুষের সমাগম ঘটায় তারা নিয়মিতই টহল দিচ্ছিলেন। এসময় ইদ্রিছকে মন্দির থেকে বের হতে দেখে তাকে ধরে ফেলি এবং মন্দির থেকে কোরআন উদ্ধার করি। মন্দিরে কোরআন রাখা ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন ইদ্রিছ। এ ঘটনার পর সমবেত ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।”
কীর্তন কমিটির সভাপতি দিলীপ পাল বলেন, “ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কীর্তন শেষ করেছি। কিন্তু ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বৃহস্পতিবার কিছু অনুষ্ঠান থাকলেও সেগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে হিন্দু অধ্যুষিত উত্তর রাজনগর পালপাড়ার সকল পরিবারের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।”
দিলীপ পাল অভিযোগ করে বলেন, “দীর্ঘকাল থেকে আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এক সঙ্গে বসবাস করে আসছি। কখনও এমনটা দেখিনি। আমার ধারণা উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং হওয়ায় স্বাধীনতাবিরোধী ও হিন্দু-বিদ্বেষীরা ওই দলের মধ্যেই স্থান করে নিয়েছে। এখন আমাদের থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে।”
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল-মামুন বলেন, “ইদ্রিছকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। হিন্দু সম্প্রদায়ের আতঙ্ক দূর করার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
পুলিশ সুপার মোহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, “এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ঘটনা তদন্তে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
গত বছরের ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিন বুধবার ভোরে কুমিল্লা শহরের নানুয়াদীঘির একটি পূজামণ্ডপে কোরআন রাখা দেখে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এ ঘটনায় অন্তত আটটি মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়। সেদিনই চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় পাঁচজন। পরের নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয় এবং নোয়াখালীতে দুজন নিহত হন।
নানুয়াদীঘির পাড়ের দুটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও বিশ্লেষণ করে ইকবাল নামের যুবককে শনাক্তের কথা জানায় পুলিশ। একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে বই জাতীয় কিছু হাতে নিয়ে এক যুবককে রাত ২টার পর স্থানীয় দারোগাবাড়ি শাহ আব্দুল্লাহ গাজীপুরীর (রহ.) মাজার থেকে বেরিয়ে পূজা মণ্ডপের দিকে যেতে দেখা যায়।