গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছখালী গ্রামে মধুমতি নদীতে জিও ব্যাগ ফেলেও ঠেকানো যাচ্ছে না তীব্র নদী ভাঙন। চোখের পলকেই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে আবাদি জমি ও বসত ভিটা। ফলে নিরাশ্রয় হয়ে পড়েছে এই গ্রামের হাজার হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের দেওয়া হয়েছে আর্থিক সহায়তা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মধুমতী নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রূপ নিয়ে নিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙনে। এতে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি, বসত ভিটা, রাস্তাঘাট,গাছপালাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে নিঃস্ব হয়ে গেছে নদীর পাড়ের কয়েকশ পরিবার। গত দুই দিনে ১৫টি বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে নদী গর্ভে। খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয়েছে এসব পরিবারের। কেউ বা ভাঙন আতঙ্কে ছাড়ছে চিরচেনা বসত ভিটা। হুমকির মুখে রয়েছে শত শত একর ফসলী জমি ও বসতভিটা।
গত কয়েক দিন ধরে ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও ঠেকানো যাইনি নদী ভাঙন। ভাঙন থেকে বাঁচতে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। তারা বলছে, জিও ব্যাগ নয় নদী ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজন সিসি ব্লক।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আসমা বেগম বলেন, “আমার বাড়িটা নদী ভাইঙ্গে নিছে। পাঁচটা মেহগুনি গাছ ছিল তাও নিয়ে গেছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে পাশের বাড়ি উঠছি। আমার আর্থিক অবস্থা ভালো না। আমি নতুন কইরে কীভাবে একটা বাড়ি করব? আমার তো জমিজমাও নাই। আমি এখন ছেলে-মেয়ে নিয়ে কই থাকব?”
এ বিষয়ে নদী পাড়ের বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, “গত দুই দিনে প্রায় ১৫টা ঘর নদী নিয়ে গেছে। আমার বাড়িটা দশ হাত দুরে আছে। আমার এই ভিটা ছাড়া কোনো জায়গা-জমি নাই। এই বাড়িটা যদি ভাইঙ্গে যায়, ছেলে মেয়ে নিয়ে পথে বসা ছাড়া উপায় হবে না। সরকারের কাছে দাবি আমাদের একটা স্থায়ী সমাধান।”
আশি বছর বয়সী জাহানারা খাতুন বলেন, “আমার কোন ছেলে মেয়ে নাই। পরের জমিতে ঘর বানায় থাকতাম তাও নদী নিয়ে গেছে। আমার আর কিছু নাই। আমি এখন কই থাকব তা নিজেও জানিনা।”
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, “ওইখানে মাটির যে বেয়ারিং ক্যাপাসিটি সেটা উত্তর বঙ্গের মতো। তাই নদীর ভাঙনের ধরনটাও অন্যরকম। আমরা ভাঙন রোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হচ্ছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।”
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, “আমরা নদী ভাঙন এলাকায় পরিদর্শনে গিয়েছি। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের যে সমস্ত সহযোগিতা রয়েছে তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং ঘরবাড়িগুলো মেরামতের জন্য সমস্ত উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি।”