বরিশাল জেলা আদালত চত্বরে আসামির ছবি তুলতে গিয়ে অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এতে স্থানীয় পত্রিকাসহ জাতীয় টেলিভিশন চ্যানেলের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
এ সময় সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলসহ টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা থেকে থেমে থেমে চলে হামলার ঘটনা।
জানা গেছে, এ সময় থেমে থেমে চলা কয়েক দফা হামলায় একপর্যায়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হাওলাদারের বাহিনীর সঙ্গে আইনজীবী সহকারীরাও অংশ নেয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। পরবর্তীতে কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল হকের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত করেনি কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, নিজ এলাকায় ভূমি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে বাকেরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হাওলাদারসহ পাঁচজনকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। এই খবর সংগ্রহ করাসহ তাদের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করতে বেলা ১২টার পর থেকে সাংবাদিকরা আদালত চত্বরে অবস্থান নেন। কিন্তু আদালতে কর্মরত পুলিশরা কোনোভাবেই আসামির ছবি বা ভিডিও ধারণ করতে দিচ্ছিল না। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনেও বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে।
এ প্রসঙ্গে সংবাদকর্মীরা জানায়, আসামি শহীদ হাওলাদারকে যখন কারাগারের গারদখানা থেকে বের করা হচ্ছিল, তখন সাংবাদিকেরা ছবি ও ভিডিও ধারণ প্রস্তুতি নিলে শহীদুল ইসলাম হাওলাদারের লোকজন তাতে বাধা দেয়। সেই বাধা উপেক্ষা করে সাংবাদিকেরা ছবি ধারণ করতে গেলে তাদের ওপর চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা করে এবং বাংলাভিশন টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসনসহ দুজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ সময় জেলা পুলিশের দায়িত্বরত সদস্যদের অনেকটা নীরব ভুমিকায় থাকতে দেখা যায়। পরে হামলায় আহত সংবাদকর্মীদের উদ্ধার করে নারী ও পুরুসসহ ১৭ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এছাড়াও আহত একাধিক সংবাদকর্মী স্থানীয় চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যান।
তারা আরও জানায়, এ নিয়ে আদালত চত্ত্বরে পরে আরও সাংবাদিকেরা উপস্থিত হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে হামলাকারীরা আদালত চত্বরের উত্তর এবং সাংবাদিকরা দক্ষিণ পাশে অবস্থান নিলে মাঝখানে পুলিশ সদস্যদের থাকতে দেখা যায়। পরে পরিস্থিতিও অনেকটা শান্ত হয়। কিন্তু এরইমধ্যে কোনো কিছু বোঝার আগেই আদালতের উত্তর পাশ থেকে আইনজীবী সহকারী অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন একত্রিত হয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে।
এ সময় সাংবাদিকরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তাদের মারধর করাসহ টেলিভিশন চ্যানেলের কয়েকটি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সাংবাদিকরা আত্মরক্ষার্থে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের অন্তত পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও একাধিক মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে।
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম বলেন, “হামলার ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।