• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

‘অশনির’ প্রভাবে ২ ঘণ্টা বিলম্বে বিমান অবতরণ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ৯, ২০২২, ০৯:৪২ পিএম
‘অশনির’ প্রভাবে ২ ঘণ্টা বিলম্বে বিমান অবতরণ

ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাবে বরিশালে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ঝালকাঠিতে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রস্তত রাখা হয়েছে ৯১টি আশ্রয় কেন্দ্র। এদিকে ‘অশনির’ প্রভাবে কক্সবাজারে ২ ঘণ্টা বিলম্বে বিমান অবতরণ করেছে।

কক্সবাজার

‘অশনির’ প্রভাবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ১৬২ যাত্রী নিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা দেরিতে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।

সোমবার (৯ মে) সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি। যাত্রীরা সুস্থ রয়েছেন।

কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হজরত শাহাজালাল বিমানবন্দর থেকে ৩টা ৩০ মিনিটে ১৬২ জন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট যা বিকেল ৪টা ১১ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় ছিল। কিন্তু বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকায় পাইলট বিমানটি অবতরণ অনিরাপদ মনে করায় পরে সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

পরে বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ৫টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ে যা সন্ধ্যা ৬টা ২ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। এ বিলম্বের জন্য যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। আর যাত্রীরা সুস্থ রয়েছেন এটিও নিশ্চিত করেছে কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বরিশাল

অশনির’ প্রভাবে বরিশালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বজ্রপাত,বাতাসের গতিবেগ ৫০/৬০ কিলোমিটার বেগে এবং জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ৩/৪ ফুট বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বরিশাল আবহাওয়া অফিস।

সমুদ্র বন্দরসমূহে ২ নম্বর হুঁশিয়ারী সংকেত থাকলেও স্থানীয় নদীবন্দরসমূহে ১ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

সোমবার (৯ মে) বেলা সোয়া ১১ টার দিকে বরিশালে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়া। এরপর থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এসময় বাতাসের গতিবেগ স্বাভাবিক থাকলেও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। এতে রাস্তা ঘাট ফাঁকা হলেও শ্রমজীবী মানুষের আনাগোনা রয়েছে।

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বরিশালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বজ্রপাত,বাতাসের গতিবেগ ৫০/৬০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যেতে পারে।

এসময় উপকূলীয় জেলাসমূহ ও দ্বীপ-চরাঞ্চলে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের তুলনায় ৩/৪ ফুট বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড় অশনির সমুদ্র বন্দরসমূহে ২ নম্বর হুঁশিয়ারী সংকেত থাকলেও স্থানীয় নদীবন্দরসমূহে ১ নম্বর সর্তক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবাসীর মধ্যে। সোমবার সকাল থেকে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকাগুলোর আকাশে মেঘের সঞ্চার ও বেশ কিছু জায়গায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় জনমনে অশনি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

তবে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের কথা মাথায় রেখে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে জেলা পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতারা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।

‘অশনি’ মোকাবেলায় বরিশাল বিভাগের ৪/৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি সিপিপি ভলান্টিয়ারদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা যায়।

ঝালকাঠি

দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দক্ষিণের উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠিতে।

সোমবার সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বাতাসের গতিবেগ না থাকলেও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। সুগন্ধা, বিষখালী এবং হলতা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটা বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীর পানি বৃদ্ধি হলেও এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, সোমবার বিকেল পর্যন্ত সুগন্ধা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১ দশমিক ১৫ মিটার।

জেলার ফসলের মাঠগুলোতে মুগ ডাল এবং বোরো ধান রয়েছে। এর মধ্যে মাঠে থাকা ৮০ ভাগ ধান কাটার উপযোগী হয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বৃষ্টি ও বাতাসের প্রভাবে অনেক ক্ষেতের ধান পরে যাওয়ায় কৃষকদের লোকসান গুনতে হবে বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন।

জেলা দুর্যোগ ব্যস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিপদ সংকেত বাড়লে দুর্যোগ বিষয়ক সভা করে পরবর্তী প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে।

তবে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্য এবং বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ঘুর্ণিঝড়কালীন দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। এছাড়াও পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পৌর প্যানেল মেয়র বাবু তরুণ কুমার কর্মকার।

শরণখোলা (বাগেরহাট)

‘অশনির’ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উপকূলে। সোমবার (৯ মে) সকাল থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে বইছে হালকা বাতাস। ‘অশনি’ মোকাবেলায় দুপুরে জরুরি সভা করেছে শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন। সভায় দুর্যোগ পূর্ব ও পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তত রাখা হয়েছে সুন্দরবনসহ উপজেলার ৯১টি আশ্রয় কেন্দ্র।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাবে অশান্ত হয়ে উঠছে বঙ্গোপসাগর। ঝড়ের পূার্বাভাস পেয়ে দুদিন আগেই শরণখোলার সমস্ত মাছ ধরা ট্রলার নিরাপদে ঘাটে ফিরে এসেছে। বহু ফিশিং ট্রলার এখনও সাগরে রয়েছে। ওইসব সব ট্রলার সাগরে কিনারে অবস্থান নিয়ে মৎস্য আহরণ করছে বলে মৎস্য ব্যবসায়ী ও বনবিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

অপরদিকে, শরণখোলার মাঠের পাকা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ১৫ বিঘার বোরো ধান কাটা বাকি রয়েছে এখনও। ঘূর্ণিঝড় ‘অশনির’ প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় মাঠের ধান নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষীরা। শ্রমিক সংকটে কারণে এসব পাকা ধান কাটতে পারছেন না বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, শরণখোলায় মোট সাড়ে তিনশ সমুদ্রগামী ফিশিং ট্রলার রয়েছে। ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে সমস্ত ট্রলার সাগর থেকে দুদিন আগেই উঠে এসেছে। ট্রলারগুলো রাজৈর মৎস্য অহরণ কেন্দ্রসহ বগী, তাফালবাড়ী, রাজেশ্বর, পূর্ব খোন্তাকাটা ও কুমারখালী ঘাটে নিরাপদে অবস্থান করছে।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা আলোরকোল থেকে ফরেস্টার দিলিপ মজুমদার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে জানান, সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। হালকা বাতাসও বইছে। সাগর উত্তাল না হলেও ঢেউ হচ্ছে। দুবলার চরের কাছাকাছি সাগরের নিরাপদ দূরত্বে থেকে বহু ট্রলার মাছ ধরতে দেখা গেছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তফা মশিউল আলম জানান, এবছর উপজেলায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি কাটা হয়ে গেছে। এখনো ১৫শ বিঘা জমিতে পাকা ধান রয়েছে। ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়েই পাকা বোরো ধান কাটার পরামর্শ দেওয়া হয় চাষিদের। কিন্তু, শ্রমিক সংকটের কারণে কাটতে পারেননি বলে জানিয়েছেন তারা। বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি হবে না। তবে ঝড়ো বাতাসে পাকা ধান ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের বগী, চালিতাবুনিয়া, সোনাতলা, খুড়িয়াখালী এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে সহস্রাধিক পরিবার বসবাস করে। তারা ঝুঁকিতে রয়েছে।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. নূর-ই আলম সিদ্দিকী বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৯১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, মোমবাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিটি ইউনিয়নে আলাদা আলাদা দুর্যোগ কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইউএনও জানান, উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রায়হান উদ্দিন শান্তর সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!