• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অবৈধ বালু উত্তোলন: হুমকির মুখে পদ্মাপাড়ের মানুষ


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২২, ০৯:৩৪ এএম
অবৈধ বালু উত্তোলন: হুমকির মুখে পদ্মাপাড়ের মানুষ

পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পাবনার চরভবানীপুর, জয়েনপুর, খাস জয়েনপুর, চরকুরুলিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে নদীপাড়সহ চরাঞ্চলের মানুষ।

সোমবার (১ আগস্ট) পদ্মা নদীর পাবনা-কুষ্টিয়া সীমানার বাংলাবাজার, চরকোষাখালী ও শিলাইদহ ঘাট থেকে পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট পর্যন্ত সরেজমিনে নৌপথে ঘুরে দেখা যায় প্রায় অর্ধশত ছোট-মাঝারি ও বড় ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাঝ নদী ও তীরের কাছাকাছি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনের পর সেখান থেকে বালু বড় বড় বলগ্রেড কার্গো (ছোট জাহাজ) দিয়ে অন্যত্র স্থানান্তর ও বিক্রির উদ্দেশ্যে পাঠানো হচ্ছে। পাবনার বেড়া থেকে পাকশী হার্ডিঞ্জ পয়েন্টসহ পুরো পদ্মায় বড় বড় বালুবোঝাই বলগ্রেডের সমারোহে পরিণত হয়েছে।

বলগ্রেড মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন নদীতে থেকে পাঁচ, চার, তিন ও আড়াই হাজার ফুট বালু উত্তোলন করা হয়। সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর পদ্মানদীর পয়েন্ট থেকে বালুবোঝাই করে তারা কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নৌপথে এই বালি পৌঁছে দিচ্ছেন বিক্রেতার কাছে।

বাদামচাষি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “প্রতিবছর কষ্ট করে ফসল ফলাই। ঘরে তোলার আগেই বালু দস্যুদের ছোবলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাই। ফসল আর ঘরে তুলতে পারি না। এদের বিরুদ্ধে কোনো কথাই বলা যায় না।”

কলাচাষি আসলাম প্রামাণিক বলেন, “চরাঞ্চল ও নদীপাড়ের মানুষের জীবন কীভাবে চলে সেটা আপনাদের অজানা নয়। দেশ বর্তমানে অনেক আধুনিক হয়েছে। তবু আমরা নানা সমস্যা জর্জরিত। কিন্তু প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বালু উত্তোলন। আমাদের প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত ও হুমকির মুখে ফেলছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে এদের রুখে দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারের এই দস্যুদের কঠোর হস্তে দমন জরুরি হয়ে পড়েছে।”

পাবনা সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কায়ছার আহমেদ বলেন, “কয়েক দিন আগেই সেখানে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। নৌপথে অভিযান চালানোর কারণে প্রশাসন যাওয়ার আগেই বালু দস্যুরা সটকে পড়ে। ফলে আমাদের অভিযান সফল করতে পারি না।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বালু তোলা যাবে না এমন পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্র উপেক্ষা করে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট ও আশপাশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছিল। ১৫-২০ দিন আগে সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

হেমায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মালিথ বলেন, “কুষ্টিয়ার প্রভাবশালীদের কাছে আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে অনেকবার চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারিনি। শুনেছি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার মামা পরিচয় দিয়ে এই অপকর্ম করা হচ্ছে।”

এলাকার জনগণের এবং ভূমি সম্পদের স্বার্থে এই বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, “মাঝেমধ্যেই সেখানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। বালুদস্যুদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!