রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কুয়েতগামী বিমানে উঠে আলোচনায় আসা শিশু জোনায়েদ মোল্লার (১২) শিকলবন্দী থেকে মুক্তি মিলেছে। না বলে বাড়ি থেকে আর কোথাও বের হবে না এমন আশ্বাসে শিশুটির পায়ের শিকল খুলে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৯টি গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ওঠে জোনায়েদ। পরদিন মঙ্গলবার রাতে শিশুটিকে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করে বিমানবন্দর থানা-পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার পারইহাটি গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী ইমরান মোল্লার ছেলে জোনায়েদ মোল্লা (১২) । বেশ কয়েক বছর আগে মা অন্যত্র চলে যাওয়ায় সৎমায়ের কাছেই বড় হতে থাকে জোনায়েদ। ভর্তি করে দেওয়া হয় উপজেলার উজানী হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। তবে বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না বলে বাইরে চলে যায় জোনায়েদ।
জোনায়েদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার জোনায়েদ বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে ইজিবাইকে করে মুকসুদপুর থেকে বাসে উঠে ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখান থেকে বসুন্ধরা হয়ে যায় এয়ারপোর্টে। পরে এয়ারপোর্টের ৯টি গেটের নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে উঠে পড়ে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের রাত ৩টা ১০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে। প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বিমানের সিটে বসে থাকার পর জুনায়েদ ভেতরের করিডরে হাঁটাচলা করছিল। এ সময় কেবিন ক্রু তাকে সিটে বসার পরামর্শ দেন। তখন সে একটি সিটে বসে পড়ে। জুনায়েদ যে সিটে বসেছিল পাশের সিটের যাত্রী শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে বসতে বলেন। কিন্তু জুনায়েদ তার বাবা-মায়ের বিষয়ে কোনো কিছু বলতে পারেনি।
বিমানে উঠতে পারলেও উড়তে না পেরে আক্ষেপ নিয়ে জোনায়েদ বলেন, “বিমানে উড়তে পারলে ভালো লাগত, বড় হয়ে একদিন বিমানে উড়ব। এখন থেকে ঠিকভাবে পড়াশোনা করব। পড়ালেখা করে বড় হয়ে একদিন বিমানের পাইলট হব, আর সেদিন পরিবারের সবাই কে নিয়ে বিমানে উড়ব।”
বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় কেন জানতে চাইলে জোনায়েদ বলে, “রোববার আমার বাবা আমাকে মারধর করে। পরে আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রথমে মায়ের (আপন মা) কাছে যাই। কিন্তু মা আমাকে বসতেও বলে নাই। পরে সেখান থেকে ঢাকায় চলে যাই। ঢাকা পৌঁছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করি। পরের দিন সোমবার সন্ধ্যায় বসুন্ধরা থেকে এয়ারপোর্টে যাই। আমি কোনো কিছু না বুঝেই বিমানে উঠে পড়েছিলাম।”
জুনায়েদের বাবা ইমরান মোল্লা বলেন, “এয়ারপোর্ট থানা থেকে ফোন আসার পর জোনায়েদের খোঁজ পাই আমরা। পরে আমার ভাই ঘটনাস্থলে গিয়ে জুনায়েদকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে এসে পরদিন সকালে আবারও পালিয়ে যায় জোনায়েদ। পরে খুঁজে বের করে পায়ে শিকল দিয়ে ঘরের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখি। পরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার শিকল খুলে দিয়েছি।”