সরকারি চাকরি পেয়ে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদ আল ফয়সালের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন স্ত্রী।
জানা যায়, ১২ বছর আগে বরিশাল রহমতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করতে গিয়ে বরিশালের গৌরনদী শহরের আল মাহমুদ ফয়সালের ও বরগুনার বিথির(ছদ্মনাম) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৩ সালে তার একসঙ্গে ডিপ্লোমা শেষ করেন। তারপর বিএসসি গ্র্যাজুয়েশন নিতে ২০১৫ সালে ভর্তি হন ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ফয়সাল লেখাপড়া করতেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় নিয়ে আর বিথির বিষয় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।
২০২০ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ হওয়ার আগেই দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০১৯ সালে বিয়ে করেন ফয়সাল ও বিথি। তখন ফয়সালের বাবা-মা জানান, সবে মাত্র তার ছেলের লেখাপড়া শেষ হয়েছে। ভালো চাকরি হলে বড় অনুষ্ঠান করে ছেলের বউকে উঠিয়ে নেবেন। এমনটাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিথির বাবা বজলুর রহমান।
এরপর দুজনই চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। অনেক চেষ্টার পর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে নেছারাবাদ পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে যোগদান করেন মো. মাহমুদ আল ফয়সাল। চাকরিতে যোগদান করার পর বিয়ের অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন ফয়সাল ও বিথির পরিবার।
বিথির পরিবার জানায়, ফয়সাল চাকরিতে যোগদানের পর প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসতেন। বিপত্তি শুরু হয় চলতি বছরের ৫ নভেম্বর সকালে। স্বাভাবিক দিনের মতো ফয়সাল তার শ্বশুরবাড়ি থেকে সকালে কর্মস্থলে চলে যান।
পরে বিথি বিছানা ঠিক করতে গিয়ে একটি হলুদ খাম দেখতে পান। খামটি খুলে বিথি দেখেন তার স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। পরে বিথি তার মায়ের ফোন থেকে ফয়সালকে কল দিতে থাকেন, কিন্তু কোনোভাবে ফয়সালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না।
এই ব্যাপারে বিথি বলেন, “আমি জানি না কী আমার অপরাধ। ফয়সাল যেই সময় আমার কাছে যা চাইত ও যেভাবে চলতে বলত আমি সব সময় সেই রকম চলতাম। আমরা দুজন যখন ঢাকাতে ভর্তি হই তখন ওর ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফিসহ ওর যাবতীয় খরচ আমি বহন করেছি। আমার টিউশনির টাকা পুরোটা ফয়সালের হাতে তুলে দিতাম।”
বিথির বাবা বলেন, “আমাদের মেয়ের সঙ্গে হওয়া সকল অন্যায়ের বিচার চাই।”
এদিকে এ ঘটনার পরে বিথি তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ফয়সাল বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর কাছে যৌতুক দাবি করেন। স্ত্রীর পরিবার কমবেশি ফয়সালকে টাকা-পয়সা দিতেন। এরই মধ্যে ফয়সাল পরনারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের ফাটল ধরে। ফয়সাল এ বছর ১৫ অক্টোবর তার স্ত্রীকে রেজিস্ট্রি তালাক দিয়ে সেই তালাক গোপন রেখে ১৯ অক্টোবর হতে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় বরগুনার শ্বশুরবাড়িতে তার স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করেন। ৫ নভেম্বর সকালে ফয়সাল তার শ্বশুরবাড়ি থেকে তাদের বাড়ি যাওয়ার সময় গোপনে একটি খামে তালাকের নোটিশ রেখে যান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফয়সাল গণমাধ্যমকে বলেন, “মামলায় উল্লেখিত বিষয়গুলো মিথ্যা। তাকে ডিভোর্স দেওয়া হয়েছে। ওই মেয়ে আমার সঙ্গে সংসার করতে ইচ্ছুক, কিন্তু আমি ইচ্ছুক না।”