• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
২৩ নাবিকসহ জাহাজ জিম্মি

‘তোমরা আমার মানিককে বুকে ফিরিয়ে দাও’


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৪, ০৬:৫৫ পিএম
‘তোমরা আমার মানিককে বুকে ফিরিয়ে দাও’

‘তোমরা আমার আদরের ছেলেকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও। শাকিলের কিছু হলে আমি বাঁচব না। আমার মানিককে বুকে ফিরিয়ে দাও। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, আমার সন্তানসহ জিম্মি সবাইকে যেন তাদের মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’

সন্তানের জন্য এভাবেই আজাহারি করছিলেন সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে অপহৃত বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ফায়ারম্যান মোশারফ হোসেন শাকিলের (২৪) মা আনোয়ারা বেগম।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) শাকিলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি কয়লা এলাকায় বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। ছেলেকে ফিরে পেতে সারাক্ষণ কাঁদছেন তিনি।

শাকিলের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, “আমার ছেলে ফোনে আমার কাছে কথা লুকিয়েছে। সে বলে, ‘আমার মোবাইলে এমবি নেই। আমি আগামী অনেকদিন কথা বলতে পারব না। আব্বাকে দিয়ে আপনার ওষুধ নিয়ে আসিয়েন’। এটাই ছিল তার সঙ্গে শেষ কথা। এরপর থেকে তার মোবাইলফোন এখন পর্যন্ত বন্ধ।”

জানা যায়, শাকিল মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সোনাই গ্রামের শামসুল হক বাড়ির শামসুল হকের ছোট ছেলে। শামসুল হকের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট শাকিল। জলদস্যুদের হাতে আটকের পর শাকিলের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সন্তানের জীবিত ফিরে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন অসুস্থ বাবা-মা।

এইচএসসিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় চার বছর আগে শাকিল চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে উত্তীর্ণ হয়ে জাহাজে যোগ দেন। সবশেষ চার মাস আগে দেশ থেকে ছুটি কাটিয়ে জাহাজে ফিরেছেন। এবার ছুটিতে দেশে এলে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন শাকিল নামের একজন সোমালিয়ায় আটক জাহাজে রয়েছেন। তাকে ফিরে পেতে পরিবারের লোকজন আকুতি করছেন। আমরা যতটুকু দেখছি সরকার তাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি, আটক হওয়া সবাই দেশে ফিরে আসবেন।’

মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজটিতে থাকা ২৩ জন নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন।

যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশন (ইউকে এমটিও) তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে এ ঘটনা ঘটেছে। দুটি নৌযানে (একটি বড় এবং আরেকটি ছোট) চড়ে জাহাজটির কাছাকাছি এসে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। ইউকে এমটিও সমুদ্র চলাচলকারী অন্য জাহাজগুলোতে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে।

Link copied!