• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

৫ সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া সেই এসিল্যান্ডকে প্রত্যাহার


লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৫, ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম
৫ সাংবাদিককে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়া সেই এসিল্যান্ডকে প্রত্যাহার
লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার। ছবি: সংগৃহীত

জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রেখে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগের ঘটনায় লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রাতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমানের দেওয়া আদেশে তাকে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন  জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ।

এর আগে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে ৫ জন সাংবাদিককে অফিসে আটকে রাখে ওই সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার। 

ওই পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রাখার প্রায় ৪০ মিনিট পর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি. এম. এ. মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অফিস গেটের তালা খুলে তাদের মুক্ত করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতেও এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সাংবাদিকদের অপদস্থ করেন। এ সময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নিলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিস্থিতি শান্ত করেন এবং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

সাংবাদিকসহ সবাই ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর সবার শেষে ঘটনাস্থল ত্যাগ করা একটি টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সনের মোটরসাইকেল আটকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার।

এ ঘটনার পর সাংবাদিকরা শহরের মিশনমোড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দুপুর ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবস্থান ধর্মঘট তুলে নেন।

সাংবাদিকরা জানান, আজ সকাল থেকে এসিল্যান্ড অফিসের তিনজন অফিস সহকারী ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করছিলেন। সেখানে এসিল্যান্ড উপস্থিত ছিলেন না। মাইটিভি ও ডেইলি অবজারভার পত্রিকার প্রতিবেদক মাহফুজ সাজু ওই শুনানির ভিডিও ধারণ করেন। এতে অফিস সহকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এসিল্যান্ডকে ডেকে আনেন।

তারা জানান, এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার আসার পর মাহফুজ সাজু জানতে চান যে এসিল্যান্ডের অনুপস্থিতিতে অফিস সহকারীরা ভূমি সংক্রান্ত শুনানি করতে পারেন কি না। এই প্রশ্ন করায় এসিল্যান্ড ক্ষিপ্ত হন এবং তার নির্দেশে মাহফুজ সাজুকে আটকে রাখা হয়। এ খবর পেয়ে প্রেসক্লাব থেকে সাংবাদিক নিয়ন দুলাল, এসকে সাহেদ, ফারুক আহমেদ ও কাওছার আহমেদ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকেও আটকে রাখা হয়।

মাহফুজ সাজু বলেন, “সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত খারাপ আচরণ করা হয় এসিল্যান্ড অফিসে। এ বিষয়ে তথ্য নিতে গিয়ে সত্যতা পাই। সেই সঙ্গে দেখতে পাই যে এসিল্যান্ডের অনুপস্থিতিতে শুনানি হচ্ছে। এ বিষয়ে তথ্য চাইতেই এসিল্যান্ড আমাকে এবং পরবর্তীতে আমার সহকর্মীদেরও আটকে রাখেন।”

তিনি বলেন, “এসিল্যান্ড সাংবাদিকদের সম্পর্কে খুবই অপ্রীতিকর মন্তব্য করেছেন। তিনি আমাদেরকে জেলে পাঠানোর হুমকিও দিয়েছেন।”

এশিয়ান টেলিভিশনের লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি নিয়ন দুলাল বলেন, “এসিল্যান্ডের সঙ্গে সঙ্গে তার অফিসের সহকারীরাও আমাদের গালিগালাজ করেছেন। এডিসি রেভিনিউ আমাদের মুক্ত না করলে এসিল্যান্ড হয়তো এতক্ষণে আমাদের জেলে পাঠিয়ে দিতেন। তিনি বলছিলেন যে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে আমাদের কারাদণ্ড দেবেন।”

দৈনিক কালবেলা পত্রিকার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি এসকে সাহেদ বলেন, “এসিল্যান্ড খুবই রূঢ় আচরণ করেছেন। সাংবাদিক সম্পর্কে এত কুরুচিকর মন্তব্য একজন সরকারি কর্মকর্তা করতে পারেন, তা ভাবতেও পারিনি। সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার তথ্য সংগ্রহ করায় তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন।”

চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাপার্সন আব্দুল মান্নান বলেন, “আমার মোটরসাইকেলের সব কাগজপত্রই আছে। কিন্তু ঘটনার সময় সেগুলো সঙ্গে ছিল না। আমি এসিল্যান্ডের কাছে মাত্র ১০ মিনিট সময় চেয়েছিলাম কাগজগুলো আনাতে। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষুব্ধ থাকায় আমাকে সেই ১০টা মিনিট সময়ও দেননি, ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।”

লালমনিরহাট প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এবং এটিএন বাংলা টেলিভিশন ও দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন বলেন, “জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। শনিবারের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আমরা আন্দোলনে যাব।”

সাংবাদিকদের আটকে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এসিল্যান্ড আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকার কোনো উত্তর দেননি।

তিনি শুধু বলেন,“কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।”

সাংবাদিকদের অফিসে আটকে গালিগালাজ ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ-আল-নোমান সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোন উত্তর দেননি। তবে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এক মোটরসাইকেল আরোহীর ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, পুরো বিষয়টি অবগত হয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Link copied!