কড়া নাড়ছে শীত। তাই কে কত আগে খেজুর রস সংগ্রহ করতে পারবে, সেই প্রতিযোগিতা চলছে চুয়াডাঙ্গার গাছিদের মধ্যে। জেলার সবখানেই শুরু হয়েছে খেজুর রস সংগ্রহের কর্মযজ্ঞ। গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে যাবতীয় কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন গাছিরা। দিন দশেক পরেই মিলবে রস, গুড় ও পাটালি।
চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি মাঠের ক্ষেতের আইলে, রাস্তার পাশে, পুকুর পাড়ে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুরের গাছ জেলার অর্থনীতিতে আশীর্বাদ। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে প্রায় ৫-৬ মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে জেলার কয়েক হাজার পরিবার।
খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদনে প্রসিদ্ধ জেলা চুয়াডাঙ্গা। এ জেলায় যে রস, গুড় ও পাটালি তৈরি হয়, তা নিয়ে শীত মৌসুমে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয় এ জেলার গুড়-পাটালি। দেশের বাইরেও এর বেশ কদর রয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় খেজুরের গুড়ের হাট বসে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এই হাটে বছরে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার গুড় বেচাকেনার ব্যবসা হয়।
জেলার দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের গাছি গণি মিয়া জানান, “১০০ খেজুরগাছ তুলেছেন এবার। এর থেকে রস, গুড় ও পাটালি বিক্রি করে ৫-৬ মাস সংসার চলে যাবে তার।
জীবননগর উপজেলার কালা গ্রামের গাছি মিনাজ আলী বলেন, “রস সংগ্রহে গাছে ভাঁড় (মাটির তৈরির পাত্র) বাঁধার আগে প্রতিদিন ভাঁড়গুলো ধুয়ে নিয়ে আগুন দিয়ে পোড়া দিই। এরপর গাছে ভাঁড় পাতি। সেই সঙ্গে খেজুরের পাতা দিয়ে ভাঁড় ঢেকে দিই। এভাবে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করি। গুড়-পাটালি করার সময় কোনো কেমিক্যাল মেশানো হয় না।”
এদিকে সঠিক পদ্ধতিতে, স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে যেন রস-গুড় উৎপাদন করেন গাছিরা, এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, “ভোক্তারা যাতে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রস্তুত খেজুরের রস-গুড় পেতে পারে, এ জন্য কাজ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।”
জেলায় মোট ২ লাখ ৫০ হাজার খেজুরগাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে চলতি বছর আড়াই হাজার মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।