তিন মাস পর পর খোলা হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক। সেখানে নগদ অর্থ, অলংকার, বিদেশি মুদ্রাসহ পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের খোলা চিঠি।
এবারও এমন কিছু চিঠি পাওয়া গেছে। তার মধ্যে আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছে স্বামীকে নারী নেশা থেকে দূরে রাখতে একজন স্ত্রীর একটি খোলা চিঠি।
চিঠিতে স্বামীর নাম পরিচয় লিখে বিস্তারিত মনোবাসনা লিখে দেওয়া হয়।
চিঠিতে লেখা হয়, “রোগীর নাম : আবু বক্কর সিদ্দিক, পিতা আব্দুল হাকিম, মাতা সরুফা খাতুন। উদ্দেশ্য : আল্লাহ তা’আলা যেন তার নারী নেশা দূর করে দেন, সংসারে মন দেন, স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব সম্পূর্ণ রূপে পালন করেন, টাকা পয়সা যায় কামায় না কেন সব যেনো এনে স্ত্রীর তুলে দেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে যেন সর্বদা সুস্থ থাকেন। জীবনের সকল গুনাহের জন্য যেন খোদার নিকট খাস দিলে তওবা করেন। দিন ও দেওয়ার জন্য খেদমত করতে পারেন। অভাব দূর করে রিজিক বৃদ্ধি করে দেন।”
উল্লেখ্য, কিশোরগঞ্জ শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে ৯টি লোহার দানবাক্স রয়েছে। ৩ মাস ২৬ দিন পর শনিবার (১৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টায় এ দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এতে পাওয়া গেছে রেকর্ড ২৮ বস্তা টাকা। এখন চলছে গণনা। মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ প্রায় ৩৫০ জনের একটি দল অংশ নিয়েছেন।
এর আগে, চলতি ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া যায়। যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছিল। ২২০ জনের একটি দল দীর্ঘ সাড়ে ১৮ ঘণ্টায় এ টাকা গণনা কাজে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গিয়েছি। এর আগে ২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৬০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।