উদ্বোধনের সাড়ে তিন পার হয়ে গেছে, এখনও চালু হয়নি মোংলা-খুলনা রুটে ট্রেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ছোট ছোট সমস্যা রয়েছে। এগুলি কাটিয়ে এ রুটে ট্রেন চলাচলের জন্য কিছুদিন সময় লাগবে।
মোংলা-খুলনা ৯১ কিলোমিটার রেলপথ গত বছরের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চলাচলের কথা ছিল।
জানতে চাইলে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, লাইন চালুতে দরকার প্রয়োজনীয় জনবল। এই রুটে আটটি স্টেশন ও লাইন ক্লিয়ারিংয়ে ৫৭৬ জন জনবলের অর্গানোগ্রাম করা হয়েছে। সেটিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তাছাড়া স্টেশন আসবাবপত্রও দেওয়া হয়নি। রেলস্টেশন ও রেলক্রসিংগুলোতে নিযুক্ত করা হয়নি কোনো জনবল। রুটে চলাচলকারী রেলের সময়সূচি, ভাড়া ও শিডিউল চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এসব প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগবে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হলে তবেই রেল চলবে।
এদিকে রেলপথের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই স্প্রিংসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যাওয়ায় কাজ শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রেলপথ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক গিরিশ চন্দ্র ত্রিবেদী বলেন, “এখন আমাদের কিছু ফিনিশিং কাজ বাকি আছে। আশা করছি মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সব কাজ শেষ করতে পারব।”
উদ্বোধনের পরও কেন এত দেরি হলো, জানতে চাইলে ত্রিবেদী আরও বলেন, “প্রকল্পের বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন স্প্রিং ও যন্ত্রপাতি চুরি হচ্ছে। ফলে এসব যন্ত্রপাতি পুনরায় স্থাপন করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এখন হয়তো রেল চলবে। কিন্তু পুরো গতিতে রেল চালানোর জন্য প্রস্তুত করতে আমাদের আরও কিছুটা সময়ের প্রয়োজন।”
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন হয়। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ পুরো প্রকল্পের ব্যয় তখন ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরপর ২০১৫ সালে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এরপর ২০২১ সালে ফের সময় ও ব্যয় বাড়ে। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়।
অন্যদিকে প্রকল্পের কাজ রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রেলসেতু, ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার পথ হলেও স্টেশনগুলোর ডাবল লাইন হিসাব করে ৯১ কিলোমিটার রেলপথ, নয়টি প্ল্যাটফর্ম এবং ১০৭টি ছোট সেতু ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সিগনালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজও শেষ হয়েছে। চলছে ফিনিশিংয়ের কাজ।
নির্ধারিত সময়ে রেল চলাচল শুরু না হওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে মোংলা বণিক সমিতির সভাপতি হাবিব মাস্টার বলেন, “প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরও এতদিনেও চালু হল না, এটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার। রেল চালু হলে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে মালামাল নিতে পারব। মোংলার সঙ্গে রেলপথে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি আরও গতিশীল হবে মোংলা বন্দর। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশে আরও সহায়ক হবে এ রুট। এগুলো থেকে আমরা পিছিয়ে গেলাম।”
মোংলা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক খন্দকার মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, “মোংলা বন্দর ব্যবহার করে এই রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করার জন্য আমরা মুখিয়ে আছি। রেলপথে খরচ কমে আসবে অনেক। অর্থনৈতিক সম্ভাবনা খুলবে। সেই সঙ্গে যাত্রীরাও নানা সুবিধা পাবে। আমরা চাইব দ্রুতই যেন এই রেলপথ চালু হয়।”
মোংলা-খুলনা রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পে মোট খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।