‘মোর মানিক ধন কোনায়, বুকোত আনি দেও। মোর ছইল (আমার ছেলে) বিএ পরীক্ষার রেজাল্ট হইলে আরও ওপর পদর (প্রমোশন) গেইলো হয়। তারপর ছইলোক বিয়া দিনু হয়। মোর আশা আর পূরণ হইল না।’
একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এভাবেই আর্তনাদ করে বারবার কথাগুলো বলছিলেন রাজধানী ঢাকায় সচিবালয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়নের মা পারভিন বেগম।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বন্দর থেকে ছড়ান-আফতাবগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে ৩০ কিলোমিটার দূরে বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া গ্রামে নয়নের বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
সরেজিমেন দেখা যায়, বাড়ির সামনে চেয়ারে বসে আছেন প্রতিবেশীরা। গভীর বেদনায় অপেক্ষা করছেন। কখন মরদেহবাহী গাড়ির সাইরেনের আওয়াজ আসে, সেই গাড়িতেই আসবে সবার প্রিয় নয়ন। বাড়ির ভেতরে নারীদের জটলা। সেখানে কাঁদছেন নয়নের একমাত্র বোন সীমা আক্তার।
সীমা বলেন, “আমার ভাই নয়নের মৃত্যুর জন্য ট্রাকচালক ও পুলিশ প্রশাসন দায়ী। পুলিশ যদি রাস্তায় ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতো, তাহলে নয়ন মারা যেত না। আমি দায়ীদের কঠোর শাস্তি চাই। ঘটনার দুই দিন আগে ভাইয়ের সঙ্গে শেষবার যোগাযোগ হয়েছিল।”
২০২২ সালে জমিজমা বিক্রি করে চাকরি নিয়েছিলেন নয়ন। তার মৃত্যুতে পরিবার আজ নিঃস্ব। খালু আব্দুল খালেক ও মামা নুর ইসলাম বলেন, “হামরা আর কাকে নিয়া বাঁচমো। হামার সউগ শ্যাষ। ওই ছইল কোনায় সবার ভরসা আছিল।”
প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক ও মুকুল মিয়া বলেন, “নয়ন খুব ভালো ছেলে। সবার সঙ্গে তার সদ্ভাব ছিল। বাড়িতে এলে সবার খোঁজ খবর নিত।”
নয়ন সিলেটের বিশ্বনাথ ফায়ার স্টেশনে প্রথম যোগদান করেন ২০২৪ সালে। পরে তিনি রাজধানীর তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে যোগ দেন। ২১ দিন ট্রেনিং করে বর্তমানে বিশেষ টিমে কাজ করেছিলেন। তার ডিগ্রি পরীক্ষা শেষ হয়েছে তবে রেজাল্ট জানতে পারেননি।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) আনুমানিক রাত ২টার দিকে সচিবালয়ের সামনে রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি ট্রাক পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে সোহানুর জামান নয়ন রাস্তায় পড়ে যান। এসময় আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা রাত ৪টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই দুর্ঘটনায় আরও একজন ফায়ার সার্ভিসের সদস্য হাবিবুর রহমান আহত হয়েছেন।