মানিকগঞ্জের হাজারি গুড়ের খ্যাতি শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও ছড়িয়েছে। এই গুড়ের নামেই জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে ‘হাজারি গুড় আর বাউল গান, মানিকগঞ্জের আসল প্রাণ।’
ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথও এ গুড় খেয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
সাড়ে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই হাজারি গুড় উৎপাদন হয় মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া ও ঝিটকা এলাকায়।
জ্বলন্ত মাটির চুলার ওপর চারকোনা স্টিলের পাত্রে খেজুরের রস ঢালা হচ্ছে। একজন চুলায় জ্বাল দিচ্ছেন আর অন্য দুজন পাত্রের রস নাড়ছেন। ২০-২৫ মিনিট ধরে পাত্রে জ্বাল দেওয়া রসের ঘনত্ব যখন কিছুটা বেড়ে যায়, তখন হালকা খয়েরি রং নেয়। সঙ্গে সঙ্গে সেই রস মাটির পাত্রে ঢালা হয়। এরপর সেই জ্বাল হওয়া রসকে বাঁশের কাঠি দিয়ে সজোরে নাড়াতে হয়। এতে রসের ঘনত্ব বাড়তে থাকে এবং কিছুটা সাদা রং ধারণ করে। এভাবে ১০-১৫ মিনিট ধরে নাড়ার পর তা ঘরের মেঝেতে রাখা ছোট ছোট পাত্রে ঢালা হয়। এরপর বিশেষ এই গুড়ে হাজারি সিল বসানো হয়। এভাবেই তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী হাজারি গুড়।
হাতে নিয়ে এই গুড় চাপ দিলে গুঁড়া হয়ে যায়। মুখে দিলেই গলে যায়। স্বাদে অতুলনীয়। ১০ থেকে ১২ কেজি রসে এক কেজি হাজারি গুড় হয়। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ১৮০০-২০০০ টাকায়।
প্রায় ৩৫০ বছর আগে ঝিটকা শিকদার পাড়ার হাজারি প্রামাণিক এই খেজুর গুড় তৈরি করেছিলেন। সেই থেকে এই গুড়ের নাম হয়ে যায় হাজারি গুড়। এই গুড় দেশের আর কোথাও হয় না।
শীত এলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পিঠা-পায়েস তৈরি হয়। এ সময়টাতে খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা, বিশেষ করে হাজারি গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায়।