জাহাজে করে খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ৯দিন পর সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছালেও আকাশছোঁয়া দামের কারণে দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারেননি বাসিন্দারা। সরকারি যে চাল বরাদ্দ এসেছে তা শুধু কার্ডধারীদের দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই চাল পাননি। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে চাল কিনতে গিয়ে লাগাম ছাড়া দামে কিনতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কোরবানি ঈদ উদযাপন হতে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা পর। ঈদ উদযাপনে কীভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নিত্যপণ্য কিনবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দ্বীপের কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে সিন্ডিকেট করে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট মার্টিনে ৫০ কেজির এক বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকায়। ডিমের পিস ২০ টাকা, পেঁয়াজের কেজি ১৩০ টাকা, আলুর কেজি ১০০ টাকা, ফার্মের মুরগির কেজি ২৪০ টাকা। রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দাদের কারো কারো অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পর্যটন জাহাজ বারো আউলিয়ায় বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে এলেও অনেকে সংকটকে পুঁজি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেছেন, খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেশি রাখার কারণে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে ডিমের দাম ১৬ টাকা আর গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ৬০০ টাকায় নেমেছে। আর কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, জাহাজে আসা খাদ্যসামগ্রী ও অন্যান্য পণ্যে দ্বীপবাসীর এক মাস চলবে।
এর আগে প্রায় ৯ দিন পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীবাহী জাহাজ এমভি বারো আউলিয়া সেন্টমার্টিন জেটি ঘাটে পৌঁছায় শুক্রবার (১৪ জুন) রাত সোয়া ১১টার দিকে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনে উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে পুলিশের একটি দলসহ সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসাররা ট্রলারের করে টেকনাফে ফিরছিলেন। সেসময় ট্রলারটিকে লক্ষ্য করে মিয়ানমারের ভেতর থেকে ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। সেই দিনের পর থেকে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে কেউ যাতায়াতের সাহস পাননি।
সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের কোনো বিকল্প পথ নেই। সেই ঘটনার পর গত ৮ জুন দুপুরে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনগামী পণ্যবাহী আরেকটি ট্রলারে ৩০-৪০টি গুলিবর্ষণ করা হয়। তাতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটির বিভিন্ন স্থানে সাতটি গুলি লাগে। এ ঘটনার পর নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েন সেন্টমার্টিনে বসবাসকারী ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে বুধবার (১২ জুন) সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।