• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

কারখানায় কেমিক্যাল খেয়ে আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে যা লিখলেন ইদ্রিস


গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ০৯:২৭ এএম
কারখানায় কেমিক্যাল খেয়ে আত্মহত্যার আগে ফেসবুক পোস্টে যা লিখলেন ইদ্রিস

গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় একটি কারখানার অনিয়মের বিভিন্ন বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কারখানার এক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় রাতের পালার কাজ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এরপর কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

নিহত শ্রমিক মো. ইদ্রিস আলী (২৩) নীলফামারী সদর উপজেলার নিত্যনন্দি এলাকার আব্দুল আওয়ালের ছেলে। তিনি উপজেলার কালিয়াকৈরের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সপরিবার ভাড়াবাসায় থেকে মনট্রিমস লিমিটেড কারখানার কার্টন সেকশনে কাজ করতেন।

মৃত্যুর আগে ওই শ্রমিক কারখানা কর্তৃপক্ষের অনিয়ম নিয়ে একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘মন্ডল গ্রুপের মন্টিন্স লিমিটেড, এখানে এক বছর যাবত চাকরি করি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হচ্ছে তাদেরকে পার্মান (পার্মানেন্ট) করে। আমাকে করে না কারণ হচ্ছে আমরা মেশিনের লোক। একদিন ছয়টায় গিয়েছিলাম তার জন্য আমাদেরকে বিচার করছি (করছে), আমি কি অপরাধ করছি। তাদের জন্য আমার জীবন আমি শেষ করে দেব। এর জন্য দাবি (দায়ী) আমাদের সেকশনের প্ল্যানিং কামরুল স্যার আর হচ্ছে ম্যানেজার হারুন স্যার ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। ঈদের নিয়মে আমি অনেক কষ্ট পাইছি এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর আপনারা এর বিচার করবেন, এই পৃথিবীর মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী।’

মৃত্যুর আগে কারখানার অনিয়মের বিষয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন ইদ্রিস। ছবি: সংগৃহীত

কারখানার কয়েকজন শ্রমিক জানান, এক বছর হয়ে গেলেও ইদ্রিস আলীর চাকরি এখনো স্থায়ী করা হয়নি। স্থায়ী করার বিষয়ে তিনি যখনই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন, তখনই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এ ছাড়া তিনি নানা বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশার মধ্যে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতের পালার কাজ চলাকালে কোনো এক সময় ইদ্রিস আলী কারখানার কেমিক্যাল পান করেন। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কারখানার শ্রমিকেরা আরও বলেন, ম্যানেজমেন্টে ওই দুই কর্মকর্তা (হারুন ও কামরুল) যোগ দেওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করছেন। তারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। কথায় কথায় চাকরি থেকে ছাঁটাই করেন। অবিলম্বে তাদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। না হলে আরও শ্রমিক মারা যাবেন।

কালিয়াকৈর থানার ওসি মো. যোবায়ের বলেন, গতকাল মধ্যরাতে এক শ্রমিক কারখানার ভেতরে বিষাক্ত কিছু খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!