• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

২ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা, বোরো আবাদে অনিশ্চয়তা


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ০৫:৫৫ পিএম
২ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতা, বোরো আবাদে অনিশ্চয়তা
বাসাইল উপজেলা সদরের আন্দিরা পাড়া এলাকা। ছবি : প্রতিনিধি

অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণ করার ফলে ও পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে টাঙ্গাইলের বাসাইলে কৃষি জমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে সরিষা চাষ ব্যাহত হয়েছে। শঙ্কায় রয়েছে বোরো মৌসুমের আবাদও। এসব জমিতে আড়াই হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৭৮০ মেট্রিক টন সরিষা উৎপাদন হয়।

জানা যায়, বাসাইল পৌরসভার আন্দিরা পাড়া এলাকায় একটি কালভার্ট ছিল। দীর্ঘদিন পানি না হওয়াতে গত বছর এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তৈরি করা হয় নতুন রাস্তা। কালভার্টটি থাকলে পানির প্রবল স্রোতে নতুন রাস্তা ভেঙে যাবে, এ কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া আন্দিরাপাড়া থেকে কোম্পানি বাড়ি পর্যন্ত গত বছর অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণ করার ফলে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

বর্ষাকালে যে পানি ঢুকেছে সেই পানি বের না হওয়ার কারণে ও কালভার্ট না থাকায় এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় চাষিরা।

প্রায় দুই হাজার একর জমিতে ধানের বীজতলা ও সরিষা আবাদ করতে পারেননি চাষিরা। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে যদি পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে বোরো আবাদেরও শঙ্কা রয়েছে। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাসাইল উপজেলা সদরের এসআর পাড়া, আন্দিরা পাড়া, পাল পাড়া, মাঝি পাড়া ও বালিনাসহ বেশ কিছু জলাবদ্ধতার কারণে এবার সরিষার আবাদ করতে পারেননি কৃষকরা। বোরো ধানের বীজতলাও তৈরি করতে পারেনি। সামনে বোরো আবাদেও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। ফসলি মাঠে আবাদের ব্যবস্থা না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক। সরকারের পক্ষ থেকে যদি দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে এসব কৃষকদের না খেয়ে মরতে হবে।

কৃষক ফজল মিয়া বলেন, “অপরিকল্পিতভাবে চারদিকে রাস্তা করে ব্রিজ কালভার্ট বন্ধ করে দিয়ে এই এলাকার হাজার একর জমি রবি শস্য থেকে বঞ্চিত। বীজতলা কেউ করতে পারতেছে না। বীজতলার মধ্যে হাঁটু পানি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখে নাই। যেগুলো ছিল, সেগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। পানি নিষ্কাশন জন্য সু-ব্যবস্থা করার দাবি জানাই।”

আন্দিরা পাড়া এলাকার কৃষক বলরাম রাজবংশী বলেন, “আমরা সরিষা আবাদ করতে পারি নাই। তিন ফসলি জমিতে সবসময় ৩ ফসলই উৎপাদন করে থাকি। জলাবদ্ধতার কারণে আমরা আবাদ করতে পারতেছি না। বীজতলায় হাঁটু পানি। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না করলে বোরো আবাদ নিয়েও শঙ্কা রয়েছি। আমন ধান, সরিষা ও বোরো ধান আবাদ করে আমাদের সংসার চলে। এ আবাদের ওপর আমাদের সংসার নির্ভরশীল। সরকার কোনো ব্যবস্থা না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।”

বলরাম রাজবংশী আরও বলেন, “সরকার দ্রুত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করলে আমরা ধান রোপণ করতে পারব। ধান রোপণের ব্যবস্থা করে দিয়ে সরকার আমাদের রক্ষা করবে। এটাই আমাদের দাবি।”

বাসাইল উপজেলা কৃষি অফিসার শাহজাহান আলী বলেন, “আন্দিরা পাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে এ বছর চাষের আওতায় আসেনি। উপজেলা কৃষি বিভাগ ওই সমস্ত এলাকায় চাষের আওতায় আনার জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার জন্য এই পৌরসভায় প্রায় ৮৩০ জন কৃষককে সরিষার বীজ প্রণোদনা পুনর্বাসন হিসেবে প্রদান করেছেন। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যেন বোরো আবাদে ক্ষতিটা কাটিয়ে উঠতে পারে প্রায় ২৫০ জন কৃষককে হাইব্রিড বীজ সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।”

বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরুখ খান বলেন, “আমি ইতোমধ্যে জলাবদ্ধতা সম্পর্কে অবহিত। এলাকাবাসী আমার কাছে এসেছিলেন। তারা লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। জলাবদ্ধতা বাসাইলের দীর্ঘদিনের সমস্যা। রাস্তাসহ অন্যান্য অবকাঠামো হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট হচ্ছে। কৃষিসহ অন্যান্য কাজে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।”

শাহরুখ খান আরও বলেন, “আমার পৌরসভার প্রকৌশলী সরেজমিনে গিয়েছিলেন। জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। অস্থায়ী কিছু করলে রাস্তাটির ক্ষতি হতে পারে। এ কারণে চলতি অর্থবছরে এডিপির যে প্রকল্প, সেখান থেকে স্থায়ী কোনো কিছু করার পরিকল্পনা। যাতে রাস্তারও ক্ষতি হবে না, জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। বক্স কালভার্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করব। জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবে আশা করছি।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!