গরু চোরাকারবারী ‘ডাঙ্গোয়াল’ আতঙ্কে রাত জেগে ফসলি ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন লালমনিরহাটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার কৃষকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিরাতে ডাঙ্গোয়ালরা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু আনেন। সেই গরু নেওয়ার সময় সীমান্ত এলাকার ক্ষেতে থাকা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাই ফসল বাঁচাতে রাত জেগে দল বেঁধে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, ডাঙ্গোয়ালদের কারণে এখন ভুট্টা, তামাক, বোরো ধানের বীজতলা ও সবজিক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এক মাস আগে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শীতকালে ঘন কুয়াশা নামলে ডাঙ্গোয়ালরা বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারণে সীমান্ত এলাকার জমি থেকে তারা আশানুরুপ ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূর্গাপুর সীমান্তে ডাঙ্গোয়াল সিন্ডিকেটের এক সদস্য জানান, শুধু দূর্গাপুর সীমান্ত নয়, লালমনিরহাটের প্রায় ২২টি সীমান্তরুট দিয়ে প্রতিরাতে ভারতীয় গরু পাচার হচ্ছে। ভারতীয় গরু পাচার করার সময় বিএসএফের ভয়ে কোনটি ফসলের ক্ষেত আর কোনটি সড়ক সেটা তাদের খেয়াল থাকে না।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ডাঙ্গোয়ালরা গভীর রাত থেকে ভোর পযর্ন্ত ভারতীয় গরু বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তারা সীমান্ত এলাকা থেকে ভারতীয় গরুগুলো নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যান। তারা সড়ক পথ ব্যবহার না করে ফসলের ক্ষেত দিয়ে এসব গরু পাচার করেন। এতে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কৃষকরা সীমান্ত এলাকায় ধান, সবজি, ভুট্টা ও তামাকের চাষ করেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারণে সীমান্ত এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে শীতকালে ডাঙ্গোয়ালদের আতঙ্কে থাকতে হয় সীমান্ত এলাকার কৃষকদের। তাই ডাঙ্গোয়ালদের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য রাত জেগে ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা। এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ কৃষকদের।
নজরুল ইসলাম নামের এক কৃষক জাানান, ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু নিয়ে চলাচলের কারণে গেল এক সপ্তাহে তার এক বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। গভীর রাতে ডাঙ্গোয়ালরা ভারতীয় গরু নিয়ে ফসলের ক্ষেত দিয়ে গন্তব্যে যায়।
রমজান আলী জানান, তিনি সীমান্তে দুই বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছেন। ডাঙ্গোয়ালদের কারণে প্রায় এক বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। বাকি এক বিঘা জমির ফসল নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন। ডাঙ্গোয়ালরা দুর্ধর্ষ হওয়ায় ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদও করতে পারছেন না।
দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মেহেরুল ইসলাম জানান, তিনি ডাঙ্গোয়ালদের ফসলের ক্ষেত দিয়ে গরু আনতে নিষেধ করেছেন কিন্তু তারা শুনছেন না। বিজিবি ক্যাম্পেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েক সুবেদার মশিউর রহমান জানান, কৃষকরা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন। জনবল সংকট থাকায় সবসময় সবদিকে টহল ব্যবস্থা জোরদার সম্ভব হচ্ছে না। ডাঙ্গোয়ালরা খুবই দুঃসাহসী ও চালাক-চতুর। বিজিবির নজরদারি ফাঁকি দিয়ে তারা ভারতীয় গরু পাচার করেন। কৃষকদের ফসল যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য চিহ্নিত রুটগুলোতে টহল ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হবে বলেও তিনি জানান।