• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পোড়া চিনির বর্জ্য যাচ্ছে কর্ণফুলীতে, মরছে মাছ


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম
পোড়া চিনির বর্জ্য যাচ্ছে কর্ণফুলীতে, মরছে মাছ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানা এলাকায় এস আলম চিনিকলের গুদামের অপরিশোধিত চিনির পোড়া-গলিত বর্জ্য কারখানার ড্রেন দিয়ে সোজা কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে নদীর পানিতে বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশছে। যার কারণে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন রকম মাছ ও জলজ প্রাণী মরে ভেসে উঠতে শুরু করেছে।

এদিকে, বুধবার (৬ মার্চ) সকাল থেকে নদীর দুই তীরে মাছ ভেসে উঠতে দেখে কয়েকশ মানুষ মাছ ধরতে নেমে পড়েন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোড়া চিনির বর্জ্যের কারণে নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন কমে গেছে। সেই কারণে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না পেয়ে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী ভেসে উঠছে। বছরের পর বছর ধরে নানা রকম দূষণের কারণে গত এক দশক ধরে কর্ণফুলীতে বড় আকারের মাছ আর তেমন নেই। ছোট যে কয়েক প্রজাতির মাছ প্রতিকূল এই পরিবেশে টিকে আছে, সেগুলোও চিনি পোড়া রাসায়নিক দূষণে নিঃশেষ হতে বসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে যাওয়া কেমিক্যাল বর্জ্য কর্ণফুলী নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নদীর পানির রং পরিবর্তনের পাশাপাশি মারা যাচ্ছে মাছ, চিংড়ি-কাঁকড়াসহ নানান জলজ প্রাণী।

শুধু কর্ণফুলী নদীতেই ফেলা হচ্ছে না চিনি মিলের পোড়া বর্জ্য। কারখানার আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায়ও যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাত থেকে নদীতে মরা মাছ ভেসে আসছে। এছাড়া নানান জাতের মাছ কূলে আসছে, এলাকার মানুষ তা সংগ্রহ করছে।

জাহেদুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “সকালে নদীতে মাছ ভেসে আসার খবরে এখানে এসেছি। এখানে কেউ জাল দিয়ে আবার কেউ হাতেই মাছ ধরছে। চিনিকলের বর্জ্যে নদীর পানির রং নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক মাছ এরই মধ্যেই মারা গেছে। কিছু দুর্বল হয়ে জালে আসছে।”

অনেকের মতো নদীতে মাছ ধরতে এসেছে শিশু নাহিদ। সে জানায়, কেমিক্যালের কারণে মাছ মারা যাচ্ছে শুনে নদীতে আসা। অনেকেই মাছ ধরছে নদীতে। দুই ঘণ্টায় এক কেজির কাছাকাছি মাছ পেয়েছে সে।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “নদীর পানিতে সুগার মিলের পোড়া কেমিকেল পড়ায় মাছ নিঃশ্বাস নিতে না পেরে ভেসে উঠেছে। মাছ পাওয়ার কথা শুনে শত শত লোকজন নদীতে নেমে পড়েছে। শুরুতে বড় টেংরা, বড় চিংড়ি ও কাঁকড়া পেয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরীক্ষাগারের চিফ কেমিস্ট কামরুল আলম বলেন, “গতকালই (৫ মার্চ) আমরা পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠিয়েছি। নদীর পানিতে ডিও (দ্রবীভূত অক্সিজেন) কমে গেছে। মানমাত্রা যেখানে ৫ থাকার কথা সেটা কমে গতকাল ছিল ১। চিনি পুড়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড হয়েছে, সেসব পোড়া অংশ পানিতে এসে পড়ায় পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে।”

মাছ ভেসে ওঠার বিষয়টি জানার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম পানির মান জানতে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, “আমাদের একটি দল নদীর পানির ফিজিক্যাল ও কেমিকেল কমপোনেন্টের টেস্ট করছে। পানিতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। দ্রবীভূত অক্সিজেন দ্রুত কমে যাচ্ছে।”

শ্রীবাস বলেন, “দূষণের কারণে কর্ণফুলীতে এমনিতে বড় কোনো মাছ এখন আর দেখা যায় না। কয়েক বছর আগেও আইড় জাতীয় বিভিন্ন মাছ মিলত, সেগুলোও এখন আর নেই। নদীতে এখন শুধু গুলশা, টেংরা, চিংড়ি আর কাঁকড়া টিকে আছে। সেগুলোও অক্সিজেন না পেয়ে ভেসে উঠছে। সেগুলো নদীর পাড়ের মানুষ ধরছে। এই অবস্থায় পানির মান স্বাভাবিক হওয়ার জন্য জোয়ার-ভাটার দিকে তাকিয়ে আছেন।”

Link copied!