যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতে সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে ভাঙন বেড়েই চলেছে। বিলীন হচ্ছে বিস্তৃর্ণ এলাকা। তবে ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় হতাশ এলাকাবাসী।
জানা যায়, চৌহালীতে নদী ভাঙন নতুন কিছু নয়। ২১০ বর্গ কিলোমিটারের এ উপজেলা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে গ্রাস করছে যমুনা। যমুনার অব্যাহত ভাঙনে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ৬০ শতাংশ এলাকা বিলীন হয়েছে অনেক আগেই। দীর্ঘদিন ধরেই অবশিষ্ট দক্ষিণ এলাকায় স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণের দাবি করে আসছেন ভাঙনকবলিতরা। চলতি বর্ষা মৌসুমে ঘোড়জান, উমারপুর, উত্তর খাষপুখুরিয়া, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ, চরবিনানই, চরসলিমাবাদ, ভূতের মোড় এলাকার প্রায় ৫০০ বাড়ি-ঘর, অসংখ্য গাছপালা, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, ৪০টি দোকানসহ ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর মধ্যে অনেকেই গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টাঙিয়ে কোনো রকম বসবাস করছেন।
এদিকে অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে বহু ঘরবাড়ি, কবরস্থান, চৌবাড়িয়া বিএম কলেজ, পয়লা বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, পয়লা দাখিল মাদ্রাসা, ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, এতিমখানাসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান।
এ দিকে স্থানীয়দের দাবির মুখে চৌহালীর খাষপুখুরিয়া হতে চরসলিমাবাদ পর্যন্ত নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ৪৭ কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্পের অনুমোদন হয়। গত ২ জুন এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডল। তবে উদ্বোধনের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও নানা অজুহাতে পরিপূর্ণভাবে কাজ শুরু করেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
ভাঙনকবলিতদের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় নতুন করে তারা নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যখন ভাঙন তীব্র হয় অল্প কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে চলে যায় আর খবর থাকে না। সময় মতো কাজ শুরু করলে নতুন করে শতশত ঘর-বাড়ি আর বিলীন হতো না বলেও অভিযোগ তাদের।
চৌহালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিন বছর আগে পৈত্রিক ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। নদী আবারও বর্তমান বাড়ির কাছাকাঠি চলে এসেছে। এলাকার মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বাঘুটিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম মোল্লা জানান, দেওয়ানগঞ্জ, চরসলিমাবাদ ভূতের মোড়ের ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে৷ জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, চৌহালীর দক্ষিণে দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙন রয়েছে। বন্যার পানি বাড়ার কারণে প্রকল্পের কাজ পুরোদমে শুরু করা সম্ভব হয়নি। পানি কমে গেলে অক্টোবরে কাজ শুরু করা হবে। এখন জরুরি কাজ চলছে।