কুমিল্লায় সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অনিবন্ধিত অসংখ্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। অনিবন্ধিত অটোরিকশায় গ্যাস এবং মোটরসাইকেলে অকটেন না দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও ফিলিং স্টেশন-পেট্রলপাম্পগুলো সেটি মানছে না। ফলে নির্বিঘ্নে মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যান। একই সঙ্গে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, অনিবন্ধিত বাহন ব্যবহার করেই যত সব অপরাধ ঘটে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়। চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, বখাটেরাও অবৈধ অটোরিকশা ব্যবহার করেন। এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো যানজট ও দুর্ঘটনা বাড়ায়।
কুমিল্লা বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় অটোরিকশার নিবন্ধন আছে ২০ হাজার ৫৬২টি। কুমিল্লা-থ-১১ থেকে ১৩ পর্যন্ত সিরিয়ালের এই অটোরিকশা জেলার ১৭ উপজেলায় চলাচল করে। এদিকে জেলায় মোটরসাইকেলের নিবন্ধন আছে ৬৬ হাজার ১৮৮টি। এর মধ্যে কুমিল্লা-ল সিরিয়ালের মোটরসাইকেল ২৬ হাজার ৪১৪টি এবং কুমিল্লা-হ সিরিয়ালের মোটরসাইকেল ৩৯ হাজার ৭৭৪টি। এর বাইরে অন্যান্য জেলার বিআরটিএর নিবন্ধনে সামান্য কিছু মোটরসাইকেল সড়কে চলতে দেখা যায়। তবে অনিবন্ধিত বাহনের সংখ্যা অন্তত লাখের ওপরে হবে।
খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে নম্বরবিহীন কয়েক লাখ অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল মহাসড়ক, প্রধান-অপ্রধান সড়ক থেকে অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এসবের রোড পারমিট নেই, নম্বরও নেই। কোনো কোনো মোটরসাইকেলের পেছনে মোটরসাইকেল কোম্পানির স্টিকার লাগানো। কোনোটিতে ‘প্রেস’ লেখা আছে। এলাকার বখাটে, বেকার ও উঠতি বয়সী ছেলেদের কাছে এই ধরনের মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেশি। একই অবস্থা অটোরিকশার ক্ষেত্রেও। এতে কুমিল্লা-থ-এর পর আর কোনো নম্বর নেই। অভিযোগ ও জনশ্রুতি রয়েছে, একই নম্বর লাগিয়ে একাধিক বাহন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ এলাকায় অবস্থান করে নম্বরবিহীন অন্তত ২১টি মোটরসাইকেল ও ৯ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। পুলিশের সামনে দিয়েই এসব বাহন চলাচল করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নম্বরবিহীন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাত করে বিভিন্ন অটোরিকশায় স্টিকার লাগানো হয়। এতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা নেওয়া হয়। আমরা স্টিকারে গাড়ি চালাই। বিভিন্ন স্থানে চাঁদা দিই। নিবন্ধন করতে নানা ধরনের ঝামেলা। তাই নিবন্ধন করছি না।”
রিভারভিউ ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী আলী মনসুর ফারুক বলেন, “অনিবন্ধিত কোনো বাহনকে আমরা গ্যাস ও অকটেন দিই না।”
কুমিল্লার ট্রাফিক পরিদর্শক জিয়াউল চৌধুরী জানান, অবৈধ মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।
বিআরটিএ কুমিল্লার সহকারী পরিচালক পার্কন চৌধুরী বলেন, “অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু করব। এগুলো নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়।”
বিআরটিএ কুমিল্লার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, “অনিবন্ধিত যানবাহনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুমিল্লা শহরে কিশোর গ্যাং অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। অটোরিকশায় করে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। এর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান হবে। এর মধ্যে আমাদের রুটিনওয়ার্ক চলছে।”