খুলনার অনুশীলনের সময় ছবি তুলে তাতে অপ্রীতিকর মন্তব্য যোগ করার প্রতিবাদ করায় চার নারী ফুটবলারকে মারধর করা হয়েছে। বর্তমানে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজনের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রোববার (৩১ জুলাই) দুপুরে এ ঘটনায় আহত সাদিয়া নাসরিন বাদী হয়ে বটিয়াঘাটা থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আহতরা হলেন মঙ্গলী বাগচি, হাজেরা খাতুন, জুঁই মণ্ডল ও সাদিয়া নাসরিন।
মামলার আসামিরা হলেন তেঁতুলতলা স্কুল মাঠ এলাকার আলাউদ্দিন (১৬), সালাউদ্দিন (২২), নুর আলম (৪৮), রঞ্জি বেগম (৪০), মনোয়ারা বেগম (৫৫) ও নূপুর খাতুন (২২)।
সাদিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “অনুশীলনে গেলেই প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। অনুশীলনের ছবি তুলে এনে বাড়িতে আমার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। এতে বাবা-মা খেলতে যেতে নিষেধ করেন। মূলত এসব ছবি তুলে বাড়িতে না পাঠানোর অনুরোধ করলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালান।”
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাতরানো মঙ্গলী বাগচী বলেন, তার সঙ্গের আরেক নারী খেলোয়াড়ের অনুশীলনেরর ছবি বিভিন্ন আত্মীয়দের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া এবং নানা বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদ করায় গ্রামের একটি পরিবার তাদের বেধড়ক মারধর করেছে।
মামলার এজাহারে জানা যায়, তারা স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে’ নিয়মিত অনুশীলন করেন। এ কারণে তাকে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের কাছ থেকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। গত বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলনের সময়ে নূপুর খাতুন ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি সাদিয়ার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন। এ নিয়ে বাবা-মা তাকে বকাঝকা করেন। শনিবার বিকালে ছবি তুলে বাবা-মাকে দেখানোর কারণ জানতে চান সাদিয়া। বিষয়টি নিয়ে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাদিয়াকে গালিগালাজ করেন নুপুর। প্রতিবাদ করলে মারধর করেন। বিষয়টি বাবা-মা, ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাক ও অন্য খেলোয়াড়কে জানান। তারা সাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নূপুরের বাড়িতে যান। এতে নূপুরের পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হন। পরে আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে সাদিয়া, মঙ্গলী, হাজেরা ও জুঁই আহত হন। হামলার সময়ে সালাউদ্দিনের লোহার রডের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান মঙ্গলী বাগচী। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, এক মেয়ের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, এটা ক্রীড়াঙ্গনের ওপর সাংঘাতিক আঘাত। প্রশাসন এটা সহ্য করবে না।
বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির বলেন, ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে মামলার এক আসামি নুর আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।