• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৭০০ একর ভূমি দখলের অভিযোগ


নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৪, ০১:১২ পিএম
দুই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৭০০ একর ভূমি দখলের অভিযোগ

নোয়াখালী সুবর্ণচরের মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী, উরিরচর ও চর নোমান মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের প্রায় ৭০০ একর খাসজমি দখলের অভিযোগ উঠেছে দুই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ভূমিহীন কৃষকদের ফসল নষ্ট করে ইতিমধ্যে তারা এক সঙ্গে অর্ধশতাধিক পুকুর খননের কাজ চালাচ্ছে।

প্রশাসন জানিয়েছে, অবৈধ দখলের অভিযোগ পেয়ে দুই দফা অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।  

অভিযুক্তরা হলেন কবিরহাটের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানি ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চরলক্ষ্মী, উরিরচর ও চর নোমান মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানের প্রায় ৭০০ একর খাসজমি পাঁচ শতাধিক ভূমিহীন কৃষকের দখলে চাষাবাদ হতো। ২০১৪ সালে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সমুদ্র গবেষণার জন্য ৪০০ একর খাসজমি সরকারের কাছে বরাদ্দ চায়। ওই প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে। এরপর থেকে ওই খাসজমিতে শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইউনিস্টিটিউট স্থাপনে ১৫০ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়াধীন। নোবিপ্রবির প্রস্তাবিত জায়গায় বাইরে ৫০০ ভূমিহীন পরিবার সেই জমিতে চাষাবাদ করে আসছিল। 

সম্প্রতি সেখানে নোবিপ্রবির প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ইউনিস্টিটিউট সাউনবোর্ড থাকলেও সেটির তোয়াক্কা না করে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানি ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খাসজমি দখল করে প্রজেক্ট করার জন্য ভেকু মেশিন দিয়ে দিনরাত মাটি কেটে যাচ্ছেন। 

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরের দিকে দুই ইউপি চেয়ারম্যানের ভূমি দখলের প্রতিবাদে উপজেলার  চরলক্ষ্মী গ্রামে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেন ভূমিহীন নদী ভাঙা শতাধিক মানুষ।

সমাবেশে তারা অভিযোগ করেন, জেলার কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানি ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ দুই সপ্তাহ ধরে ৩০ থেকে ৪০টি ভেকু মেশিন দিয়ে ৭০০ একর জায়গা জুড়ে প্রজেক্ট করার কাজ শুরু করে। তাদের দাবি, শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সেটি না করে এতো বিশাল সরকারি খাসজমি ২-৪ জন লোক গিলে খাবে, সেটি কী করে হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে ভূমিহীনরা আরও জানান, দীর্ঘ ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করছেন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল কোম্পানি অভিযোগ নাকচ করে বলেন, “এ জায়গার মালিক শাহজাহান নামের এক প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আমাকে জায়গাটি দেখাশোনার জন্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা হলে তারা কাগজ থাকলে জায়গা নিয়ে যাবে। তাদের জায়গা কেউ ধরে রাখতে পারবে না।”    

মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু্ল কালাম আজাদ বলেন, “আমি জমি দখলের সঙ্গে জড়িত নই। তবে এটা আমাদের নৌকা মার্কার প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার ছিল, আমরা জনগণের জমি জনগণকে বুঝিয়ে দেব। 

আগে এসব জায়গা তাদের লোকজনের ছিল বলেও দাবি করেন সাবেক এ চেয়ারম্যান।    

সুবর্ণচর উপজেলা কমিশনার (ভূমি) অশোক বিক্রম চাকমা বলেন, অবৈধ দখলের অভিযোগ পেয়ে দুই দফা অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে ১১টি মাটি কাটার ভেকু মেশিন জব্দ করে কয়েকটি সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড এবং লাল পতাকা উত্তোলন করে দেওয়া হয়। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. দিদার-উল-আলম বলেন, ওই জায়গা শেখ হাসিনা সমুদ্র বিজ্ঞান ও সামুদ্রিক সম্পদ ইনস্টিটিউটের প্রস্তাবিত স্থান। ১ নম্বর খাস খতিয়ানভূক্তভূমিতে অবৈধভাবে কোনোরূপ স্থাপনা নির্মাণসহ অবৈধভাবে দখল আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ওই জমি অবৈধভাবে দখলের চেষ্টা করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভূমিহীনদের বিনা নোটিশে তাড়িয়ে দেওয়া অমানবিক। ভূমিহীনদের পুর্নবাসন না করে কোনো কিছু করা ঠিক না। 

Link copied!