টাঙ্গাইলের লৌহজং নদীর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম। জেলা প্রশাসকের ডাকে সাড়া দিয়ে সারা দেশ থেকে টাঙ্গাইলে এসেছেন বিডি ক্লিন বাংলাদেশের প্রায় দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক। তারাই এ নদীর ময়লা, আবর্জনা আর বর্জ্যের ভাগাড় নিমিষে পরিষ্কার করেন।
শুক্রবার (১ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হাউজিং মাঠ এলাকায় লৌহজং নদীর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওলিউজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শরফুদ্দিন, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক আলমগীর, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, বিডিক্লিনের প্রধান সমন্বয়ক জহিরুল ইসলাম রবি, জেলা সমন্বয়ক এমরান রহমান অনিম প্রমুখ।
বিডি ক্লিনের সদস্যরা প্রথমে টাঙ্গাইল পৌর শহরের হাউজিং মাঠে জড়ো হন। এরপর শপথ বাক্য পাঠ করে নেমে পড়েন নদীর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে।
জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌর এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী লৌহজং নদী। এই নদীকে ঘিরে এক সময় মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ হতো। তবে বর্তমানে নদীটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। পৌর এলাকার বিভিন্ন ময়লা আর আবর্জনার এসে আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছিল এই নদীটি।
২০১৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক নদীটি পুনঃখনন ও দূষণমুক্ত করতে কাজ শুরু করেন। আংশিক অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করলেও পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অতিদ্রুত নদীটি পুনঃখনন এবং অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ না করা হলে মানচিত্র থেকে এই নদী হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন স্থানীয়রা। বর্তমান জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম তিন কিলোমিটার নদী উদ্ধারের উদ্যোগ নেন। এখন নদীটি প্রাণ ফিরে পাবে।
স্থানীয়রা জানান, লৌহজং নদীটি সদর উপজেলার যুগনী থেকে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত ৭৬ কিলোমিটার। এক সময় শহরের নিরালাড়া মোড় এলাকায় নৌবন্দর ছিল। দেশ-বিদেশে থেকে লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা আসত এ নৌবন্দরে। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল এখানে। বর্তমানে সব কিছুই যেন রূপকথার গল্প।
স্থানীয় যুবক তারেক মিয়া বলেন, ময়লার ভাগাড়ে ও অবৈধ দখলদারদের কারণে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছিল। জেলা প্রশাসক নদী উদ্ধারের যে কাজ হাতে নিয়েছেন এখন নদীটি প্রাণ ফিরে পাবে।
বিডি ক্লিনের সদস্য সেলিম মিয়া বলেন, “জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলামের আহ্বানে আমরা দুই হাজার সদস্য কয়েকটি বাসে ঢাকা থেকে আজ টাঙ্গাইলে এসেছি। স্বেচ্ছাশ্রমে এ কাজ করে আমাদের অনেক ভালো লাগে। এ সামাজিক কর্মকাণ্ডে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।”
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহদী মিরাজ বলেন, “আমার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালো লাগে। দেশের জন্য কাজ করতে আমার অনেক ভালো লাগে। তাই আজ আমি ও আমার আম্মু টাঙ্গাইলে এসেছি লৌহজং নদীর ময়লা পরিষ্কার করতে।”
জেলা প্রশাসক কায়ছারুল ইসলাম বলেন, “লৌহজং নদী দীর্ঘ মেয়াদি পূর্ণ উদ্ধারের অংশ হিসেবে আজকে আমরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরু করেছি। বিডি ক্লিনসহ সবার সহযোগিতায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছি। নিয়মিতভাবে আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করে লৌহজং নদী দীর্ঘদিনের পুরোনো যে পানি প্রবাহ ছিল সেটি ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা সকল কার্যক্রম গ্রহণ করব।”
পৌর শহরের হাউজিং ব্রিজপাড় এলাকা থেকে শুরু করে বেড়াডোমা ব্রিজপাড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নদীর বর্জ্য পরিষ্কার অভিযানে অংশ নেন বিডি ক্লিনের ঢাকাসহ টাঙ্গাইলের দুই হাজার সদস্য। এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে জেলা প্রশাসন ও টাঙ্গাইল পৌরসভা।