• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভাবীর হোটেলে খেলেই মিলছে ভ্রমণের সুযোগ


রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
ভাবীর হোটেলে খেলেই মিলছে ভ্রমণের সুযোগ

ধরুন, আপনি দেড় কেজি চালের ভাত খেলেন। সঙ্গে দেওয়া হলো ৮ পদের ভর্তা-ভাজি, ডিম, ডাল, এক বাটি গরু, মুরগি অথবা হাঁসের মাংস। যদি সব খাবার শেষ না করতে পারেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই।  দিতে হবে না কোনো জরিমানা। তবে বিল মাত্র ১৯৯ টাকা। আর এসব খেতে পারলেই উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বিনোদন স্পট ‍‍‘ভিন্নজগত‍‍’ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়। তবে কেউ ভিন্নজগতে যেতে না চাইলে তাকে নগদ ১২৫০ টাকা দেওয়া হবে।

ধারণার বাইরের বিষয়, তাই তো? কিন্তু এভাবেই খাবার বিক্রি করে আসছেন ‘ভাবীর হোটেলে’র মালিক দুলাল মিয়া ও শাপলা বেগম। একসময় ফার্নিচার ব্যবসা ও কোয়েল খামার করেছেন দুলাল মিয়া। সেখানে ক্ষতি হওয়ায় পরে স্ত্রী শাপলা বেগমের সঙ্গে পরামর্শ করে এই হোটেলটি দিয়েছেন।  

ভাবছেন, হোটেলটির নাম কি, কোথায়? 

এ হোটেলের নাম ভাবীর হোটেল। রংপুর পীরগাছার একটি পরিচিত হোটেল। যে হোটেলে খাবার খেলে বিনোদন স্পট ‍‍‘ভিন্নজগত‍‍’ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়া যায়। ব্যতিক্রমী অফারের এই হোটেলের অবস্থান উপজেলার সৈয়দপুর বাজারের ১০০ গজ আগে। হোটেলটি ইতোমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে খাবার খেতে ভোজনরসিকরা আসছেন। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই ভাবীর হোটেল।

টিনশেডের ছোট্ট একটি ঘর। ভেতরে মানুষের কোলাহল। সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘরে রান্নায় ব্যস্ত শাপলা বেগম। হোটেলের এক পাশে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে ভাত, পোলাও, নানান পদের ভর্তা-ভাজি, শাক, ডাল, হাঁস, মুরগি ও গরুর মাংস।

দুলাল মিয়া জানান, স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে এই ভাতের হোটেলটি দিয়েছেন। এখানে তারা মাত্র ১০০ টাকা শুরু করে ১৯৯ টাকা পর্যন্ত ৪টি প্যাকেজে পেটচুক্তিতে মানুষকে খাবার খাওয়াচ্ছেন। তবে যিনি আড়াই বাটি ভাত বা পোলাও খেয়ে শেষ করতে পারেন তার কাছে তিনি কোনো টাকা নেন না। বরং দেন বিভিন্ন ধরনের উপহার। এর আগে উপহার হিসেবে নগদ টাকা দিলেও সম্প্রতি তিনি ভিন্নজগত ভ্রমণের অফার দিয়েছেন। তবে কেউ ভিন্নজগতে যেতে না চাইলে তাকে নগদ ১২৫০ টাকা দেওয়া হবে জানান দুলাল মিয়া।

তিনি আরও জানান, তার হোটেলে তিনি ফকির-মিসকিনদের ফ্রিতে খাওয়ান। এমনকি কেউ যদি এসে বলে তার কাছে খাওয়ার টাকা নাই তাকেও তিনি ফ্রিতে খাওয়ান।

শাপলা বেগম জানান, তাদের হোটেলে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন খেতে আসেন। এটা তার ভালো লাগে। তার স্বামী বিভিন্ন ব্যবসা করে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বর্তমানে এই হোটেল দিয়ে তারা বেশ ভালো আছেন।

ভাবীর হোটেলে বর্তমানে ৩ জন কর্মচারী কাজ করছেন। তারা জানান, তারা সেখানে কাজ করে বেশ ভালো বেতন পাচ্ছেন। তাদেরকে নিয়মিত বেতন দেওয়া হয়। তাদের সংসারও বেশ ভালো চলছে।

ভাবীর হোটেলে খাবার খেতে আসা ভোজনরসিকরা জানান, তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এই হোটেলে খেতে এসেছেন। হোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খাবারের মান অনেক ভালো। দামও কম।

ব্যতিক্রমী অফার ও মানসম্মত খাবারের কারণে দিন দিন এই ভাবীর হোটেলের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হোটেল মালিকের প্রতি অনুরোধ জানান ভোজন রসিকরা।

Link copied!