অবশেষে বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে মোংলার দিকে ছুটছে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে ট্রেনটি।
শনিবার (১ জুন) সকাল সোয়া ৯টায় ট্রেনটি যাত্রী নিয়ে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যায়। এটি খুলনা হয়ে মোংলা বন্দরে পৌঁছাবে। এরপর দুপুর ১টায় ফের ট্রেনটি মোংলা থেকে যাত্রী নিয়ে বোনাপোলের উদ্দেশে রওনা দেবে।
বেনাপোল রেলস্টেশনের মাস্টার সাইদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাইদুর রহমান জানান, নতুন এই রুটে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে একটি ট্রেন চলাচল করবে। খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচল করে ‘বেতনা এক্সপ্রেস’ নামে একটি লোকাল ট্রেন। সেই ট্রেনটি ফেরার পথে খুলনার ফুলতলা জংশন থেকে মোংলার দিকে যাত্রা করবে, তখন ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ট্রেনটি ‘মোংলা কমিউটার’ নাম ধারণ করে চলবে।
তিনি আরও জানান, ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন মঙ্গলবার। এছাড়া বাকি ৬ দিন এ রুটে একটি করে ট্রেন চলবে। খুলনা থেকে ভোর ৬টায় ছেড়ে বেনাপোলে পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে। বেনাপোল থেকে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে। ফুলতলা থেকে যাওয়ার পথে মোংলা কমিউটার মোহাম্মদনগর, কাটাখালী, চুলকাটি বাজার রেলস্টেশনে যাত্রা বিরতি দেবে। ট্রেনটিতে দ্বিতীয় আসন ব্যবস্থা থাকবে। ট্রেনের আসন সংখ্যা ৬৭৬টি। বেনাপোল থেকে মোংলা রেলপথে মাত্র ৮৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালকুদার বলেন, ‘আপাতত বেতনা কমিউটার ট্রেনটি বেনাপোল থেকে মোংলা কমিউটার ট্রেন হয়ে বেনাপোল-মোংলা রুটে চলাচল করবে। পরে আরেকটি রেক দিয়ে এই রুটে ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।’
সূচি অনুযায়ী, খুলনা-বেনাপোল-মোংলা-বেনাপোল-খুলনা রুটে বেতনা কমিউটার ট্রেনটি খুলনা থেকে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে।
একই ট্রেন নাম বদলে ‘মোংলা কমিউটার’ নামে বেনাপোল থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে মোংলা পৌঁছাবে ১২টা ৩৫ মিনিটে। এর মধ্যে নতুন এই রুটে যাত্রাবিরতি নাভারণে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে, ঝিকরগাছায় ৯টা ৫০ মিনিটে, যশোরে ১০টা ১১ মিনিটে, সিঙ্গিয়ায় ১০টা ৩০ মিনিটে, নোয়াপাড়ায় ১০টা ৪৬ মিনিটে, ফুলতলায় বেলা ১১টা ৪ মিনিটে, মোহাম্মদগর স্টেশনে ১১টা ৩১ মিনিটে, কাটাখালী স্টেশনে ১১টা ৫০ মিনিটে, চুলকাটি বাজারে ১২টা এবং মোংলায় পৌঁছাবে ১২টা ৩৫ মিনিটে।
ট্রেনটি মোংলা থেকে দুপুর ১টায় ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছাবে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে। এর মধ্যে চুলকাটি বাজারে ১টা ২২ মিনিটে, কাটাখালীতে ১টা ৪০ মিনিটে, খুলনার মোহাম্মদনগরে ১টা ৫৯ মিনিটে, ফুলতলায় ২টা ২৫ মিনিটে যাত্রাবিরতি করে নোয়াপাড়ায় ২টা ৩২মিনিটে, চেঙ্গুটিয়ায় ২টা ৫২ মিনিটে, সিঙ্গিয়ায় বিকেল ৩টা ১১ মিনিটে, যশোরে ৩টা ৩০ মিনিটে, ঝিকরগাছা ৩টা ৫২ মিনিটে, নাভারণে বিকেল ৪টা ১১ মিনিটে এবং বেনাপোলে পৌঁছাবে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে।
ট্রেনটি আবার বেতনা কমিউটার হয়ে বেনাপোল থেকে বিকেল ৫টায় ছেড়ে খুলনায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালে একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। নানা জটিলতায় পাঁচ দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষে ২০২৩ সালের পহেলা নভেম্বর প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দীর্ঘ ৯১ কিলোমিটার নতুন এ রেলপথে রূপসা নদীর ওপর ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ১১টি প্লাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১টি ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাসের নির্মাণ সম্পন্ন। এরই মধ্যে চার দফায় পরীক্ষামূলকভাবে চলেছে ট্রেন।
চলতি বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলার ঘোষণাও দেয়া হয়। তবে অজ্ঞাত কারণে বাণিজ্যিক ট্রেনের যাত্রা শুরু করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হন খুলনা অঞ্চলের মানুষ।
ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় চার হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এলঅ্যান্ডটি এবং ইরকন ইন্টারন্যাশনাল।