জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার তুলশীগঙ্গা নদী তীরবর্তী সন্যাসতলী মন্দিরের পাশে ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব শুরু হয়েছে। গ্রামীণ এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের গ্রামগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ।
প্রতি বছর জৈষ্ঠ্যমাসের শেষ শুক্রবারে এ মেলার আয়োজন করা হয়। সেই অনুযায়ী আজ (১৬ জুন) বসেছে ঘুড়ির মেলা। মেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন আয়োজকরা।
জানা যায়, সন্যাসী পূজাকে ঘিরে চার-পাঁচশ বছরেরও আগে এ মেলার উৎপত্তি হয়। সন্যাসতলীর এ ঘুড়ির মেলায় আশপাশের গ্রাম ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন। এ দিন সনাতন ধর্মের লোকজন মন্দিরে সন্যাসীকে পূজা দিয়ে দিনটি উৎযাপন করেন।
মেলায় প্রবেশ করলেই প্রথমে নজরে পড়বে তুলশীগঙ্গা নদীর তীরে অনেকের হাতে নাটাই ও কারও কাছে ঘুড়ি। চেষ্টা চলছে কার ঘুড়ি কত উপরে উঠতে পারে।
গ্রামীন এই মেলাকে ঘিরে তুলশীগঙ্গা নদীর তীরে বসেছে মেলা। সেখানে দোকানিরা রঙ বেরঙের ঘুড়ি দেখিয়ে ক্রেতাদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন। ঘুড়ি ছাড়াও মেলায় তৈজষপত্র ও সংসারের কাজের জিনিষপত্র, মিঠাই-মিষ্টান্ন বিক্রি করা হয়। মেলা দেখতে সব ধর্মের নানা বয়সের মানুষ আসে। সেই সঙ্গে মেলাকে ঘিরে আশপাশের গ্রামগুলোতে ধুম পড়ে উৎসবের।
মেলায় ঘুরতে এসেছেন বৃদ্ধ গোলাম রব্বানী। তিনি জানান, মেলার বয়স তার জানা নেই। তবে বাপ দাদার সঙ্গে তিনি মেলায় আসতেন। এখন তার বয়স ৭০ বছর পার হয়েছে। এবারও তিনি মেলায় এসেছেন।
রং বেরংয়ের ঘুড়ি মেলার মূল আকর্ষণ হলেও মেলায় মিঠাই-মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির হাড়ি পাতিল, হাতপাখা, লোহার জিনিষপত্র ও শিশুদের খেলনা সামগ্রীসহ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাগরদোলা নজর কাড়ে সবার।
জিয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী মেলা উপলক্ষে মেয়েজামাই এবং স্বজনদের আপ্যায়ন চলে কয়েক গ্রামে। আর মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে।”
বগুড়ার ঘোড়াধাপ গ্রামের ঘুড়ি বিক্রেতা আব্দুর রশিদ বলেন, তিনি পঞ্চাশ বছর ধরে জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ শুক্রবার এই মেলায় ঘুড়ি বিক্রি করতে আসেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঘুড়িরও প্রকার বদলে গেছে। ঘুড়ি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানা রঙের ঘুড়ি ও নাটাই মেলায় এনে বিক্রি করছেন তিনি। একটি ঘুড়ি পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।
বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাফান নিশাজ বলেন, “আমার দাদার বাড়ি আক্কেলপুরে। এখন আমরা বগুড়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছি। আমি শুনেছি সন্যাসতলীতে ঘুড়ির মেলা বসে কখনো আসা হয়নি। আজ বন্ধুর সঙ্গে মেলায় এসে নানা রকমের ঘুড়ি দেখলাম। হাজার হাজার মানুষ তাদের পছন্দমতো ঘুড়ি কেনার আগে ঘুড়ি উড়িয়ে দেখে কিনছেন। আমিও একটি ঘুড়ি ও সুতাসহ নাটাই কিনলাম। মেলায় এসে খুব ভালো লেগেছে।”
সন্যাসতলী মেলা কমিটির সভাপতি শাজাহান আলী বলেন, “প্রতি বছরের মতো এবারও সন্যাসতলী মেলা বসেছে। প্রায় চারশ বছরের অধিক পুরাতন এ মেলা আমরা হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে পরিচালনা করি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্রেতা বিক্রেতা, ব্যবসায়ীসহ সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গন ও আশেপাশের গ্রামে উৎসবে মেতে ওঠেন।”