• ঢাকা
  • রবিবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লালমনিরহাটে বাড়ছে তামাক চাষ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষক


লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:৩৩ পিএম
লালমনিরহাটে বাড়ছে তামাক চাষ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কৃষক
তামাক চাষে ঝুঁকছেন লালমনিরহাটের কৃষকরা।

তামাক চাষে ঝুঁকছেন লালমনিরহাটের কৃষকরা। কম খরচে অধিক লাভের আশায় দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানি প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তারা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এতে কৃষক পরিবারেও দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

জানা গেছে, কয়েকটি দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষ সম্প্রসারণে উৎসাহিত করে চলছেন। বাণিজ্যিকভাবে চারটি জাতের তামাকের চাষ করা হয়। এগুলো হলো এফসিভি, মতিহার, জাতি ও বার্লি। বেশ কয়েকটি তামাক কোম্পানি বীজ, সার ও অগ্রিম ঋণসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তামাক চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছে। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহযোগিতা ও বিনামূল্যে বীজ, ঋণ, সার ও নগদ অর্থসহ তামাক ক্রয়ের নিশ্চয়তার কারণে লালমনিরহাটে তামাক চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মূলত কৃষি বিভাগের উদাসীনতা, তামাক উৎপাদনের আগে কোম্পানিগুলোর দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দানে তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। কয়েক বছর আগেও লালমনিরহাটের যেসব আবাদি জমিতে শীতকালীন মৌসুমে ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছিলো, এখন সেসব জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলাসহ তিস্তা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে দিন দিন বেড়েই চলেছে তামাকের চাষ। নারী-পুরুষ ও ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে চলছে তামাক পরিচর্যার কার্যক্রম। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকজুড়ে জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া ফসলের মধ্যে বেশিরভাগ চাষ হচ্ছে তামাক।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক আকবর আলী জানান, সিগারেট কোম্পানির মাধ্যমে তামাক চাষিদের জন্য একর প্রতি জমিতে বীজ বাবদ নগদ ৩৬০০ টাকা দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ইসুবি সারের জন্য ৬ হাজার টাকার সার আগাম দেওয়া হয়। এ ছাড়া উৎপাদিত তামাক সঠিক মূল্যে কৃষকের বাড়ি থেকে কেনার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। যে কারণে এলাকায় বেড়ে চলেছে তামাকের চাষ।

একই এলাকার তামাক চাষি হেলাল উদ্দিন ও দীপক রায় জানান, বর্তমানে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে গেছে। যে টাকা খরচ করে  ধান, ভুট্টা, শাকসবজি  ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন করা হয়, সেসব বিক্রি করে কোনো কোনো সময় পুঁজিই ওঠে না। কিন্তু অল্প খরচে কোম্পানির দেওয়া ঋণ গ্রহণ করে তামাক চাষ করে ভালোই লাভবান হওয়া যায়।

সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের কৃষক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, “কয়েক বছর ধরে তামাক আবাদ করি। এবার ভেবেছিলাম আলুর আবাদ করব। কিন্তু আলুর বীজের যে দাম, তার সঙ্গে সার কীটনাশকের খরচ তো আছেই। তাই এবারও তামাক কোম্পানি থেকে টাকা নিয়ে তামাক চাষ করছি।”

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, তামাক চাষ ও সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক চাষে কৃষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছেন সাধারণ মানুষও।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, গত বছর লালমনিরহাটে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। চলতি বছরে তার থেকেও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি জমিতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় তামাক চাষ অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে এবং এর কুফল সম্পর্কে অবগত করতে কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত কৃষকদের মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে।

Link copied!