পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় আজ (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব। তিন দিনব্যাপী এ উৎসবকে কেন্দ্র করে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে সমুদ্র সৈকত। এরইমধ্যে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত আসতে শুরু করেছেন পুণ্যার্থী ও পর্যটকরা।
তিন দিনের এ রাস উৎসবে এবার লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উৎসবে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আয়োজন থাকবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। উৎসবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ।
শনিবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিনে কুয়াকাটা শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের আঙ্গিনা জুড়ে সাজসজ্জার কাজ চলছে। সেখানে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, মন্দিরের আঙ্গিনায় উৎসবের দিনগুলোতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী অবস্থান করেন। তাদের থাকা এবং খাবার ব্যবস্থা মন্দির কর্তৃপক্ষ করে থাকে। দুই বছর করোনার কারণে মানুষ রাস উৎসবে আসতে পারেনি। তাই এবার অনেক বেশী লোক সমাগম হবে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য নিহার রঞ্জন জানান, প্রতি বছর পূর্ণিমা তিথিতে শ্রী কৃষ্ণের স্মরণে রাস লীলার আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এ মেলা এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। কুয়াকাটা ও দুবলার চরে ব্যাপক আকারে অনুষ্ঠিত হয় এ রাস মেলা।
রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সমন্বয়ক কাজল বরণ দাস জানান, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে রাস মেলা উদযাপনে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রোববার রাতে স্থানীয় রাখাইন মার্কেট মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে দেশের খ্যাতিমান শিল্পী বিন্দু কনার কনসার্ট রয়েছে সোমবার রাতে। সারারাত পদাবলী কীর্তন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান রয়েছে মন্দির প্রাঙ্গণে।
রোববার রাতে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার ভোরে পূর্ব আকাশে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পুণ্য স্নান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে লীলার মূল আনুষ্ঠানিকতা। মঙ্গলবার প্রত্যুষে সমুদ্র স্নানের পর পুণ্যার্থীরা ফিরে যাবেন গন্তব্যে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, কুয়াকাটায় এটি বৃহৎ উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে বিশাল একটি মেলা বসে। শত শত দোকানি তাদের পণ্যের পশরা নিয়ে এখানে ছুটে আসেন। এবার জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় তিন শতাধিক স্টল নির্মাণ করে ব্যবসায়ীদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভার পক্ষ থেকে স্যানিটেশন সুবিধা, খাবার পানির ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্নানের পর চেঞ্জিং সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ জানান, তিন দিন ব্যাপী এ রাস মেলাকে সামনে রেখে নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা নজরদারিও রাখা হয়েছে। উৎসবের কোনো পর্যায়ে যাতে অরাজকতা সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ সজাগ রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, উৎসবে যাতে সবাই অংশ গ্রহণ করতে পারেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। উৎসব চলাকালীন আইন শৃঙ্খলসহ সকল কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মহিব্বুর রহমান মুহিব জানান, পদ্মা সেতুর কারণে যাতায়াত সহজ হওয়ায় লক্ষাধিক পুণ্যার্থীরা আগমন ঘটবে এবার কুয়াকাটায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব ও পুণ্য স্নানে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে সব কিছু তদারকি করছেন।