কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের দেড় শতাধিক চর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়েছে রোপা আমন ক্ষেতসহ ৩৪০ একর আবাদি জমি।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীতে পানি বাড়লেও তিস্তায় কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তিস্তার প্রবল স্রোতে ঘড়িয়ালডাঙ্গার বুড়িরহাটের বাঁ তীরের একটি স্পার বাঁধের আরসিসি অংশ রোববার (২৭ আগস্ট) রাতে নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে ভাঙন-ঝুঁকিতে তিস্তা পাড়ের শত শত পরিবার।
সোমবার (২৮ আগস্ট) পাউবো জানায়, সকালে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কিছুটা কমে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার রাজারহাট, উলিপুর ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৪ হাজার পরিবারের ১৬ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তাপাড়ের বুড়িরহাটের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, “এই স্পার বাঁধ দেওয়ায় আমাদের অনেক উপকার হয়েছিল। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় আমরা খুব চিন্তায় আছি। এই বাঁধ না থাকলে আমাদের ঘরবাড়ি নিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে।”
থেতরাই ইউনিয়নের চর জুয়ানসতরার বাসিন্দা খোদেজা বেগম বলেন, “গতকাল থাকি ঘরের মধ্যে এক হাঁটুসমান পানি। রান্নার চুলাও তলিয়ে গেছে। বাচ্চাদের নিয়ে কষ্টে আছি।”
চর গোড়াই পিয়ার মমতাজ বেগম বলেন, “রান্নার চুলা ভাঙি গেইছে, সকাল থাকি না খায়া আছি। বাজার যামো নৌকা নাই, হামার খুব অসুবিধা হইছে।”
ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, “আমার এলাকার চর রামনিয়াসা, জুয়ানসতরা, গড়াই পিয়ার, খারিজা নাটশালায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের শুকনা খাবারের প্রয়োজন।”
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ১৫০ মিটার বাঁধ ও আরসিসি স্পারের বাকি ৩০ মিটার রক্ষায় রাত-দিন কাজ চলমান থাকবে। আশা করছি বাঁধ ও বাকি আরসিসি স্পার রক্ষা করা সম্ভব হবে। তিস্তার পানি কিছুটা কমলেও ব্রহ্মপুত্র, ধরলায় পানি বাড়ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, “কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে রাজারহাট উপজেলার দুইটি ইউনিয়ন ও উলিপুরের একটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। জেলায় ৩৬২ মেট্রিক টন চাল, ৫ লাখ টাকা ও ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, শিশু খাদ্য বাবদ ২ লাখ ও গো-খাদ্য ক্রয় বাবদ ৫ লাখ টাকা মজুত আছে।”