রংপুর নগরীর ব্যস্ততম এলাকা লালবাগ হাট। শত বছরের পুরোনো হাট এটি। সপ্তাহে দুই দিন এখানে পুরোনো বাইসাইকেল বেচাকেনা চলছে। সাইকেলের হাট হিসেবে পরিচিত পেয়েছে এ হাট। পুরোনোর পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নতুন সাইকেলও বিক্রি হয় এ হাটে। রংপুর ছাড়া আশপাশের জেলার ক্রেতা-বিক্রেতাদের সমাগমে জমজমাট বেচাকেনা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুরোনো ও নতুন এসব বাইসাইকেল তিন থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কম দামে পাওয়া যায় বলে প্রচুর ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটে। ইতিমধ্যে লালবাগের এই সাইকেল হাট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
হাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত বছরের পুরোনো হাট এটি। সপ্তাহে রোব ও বুধবার দুই দিন জমে। এতদিন গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা হয়ে আসলেও বেশ কিছুদিন ধরে এখানে সাইকেল বেচাকেনা চলছে। ফলে সাইকেলের হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। হাটের দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে সাইকেল বিক্রি করতে আসেন ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মানুষজন। বিভিন্ন ধরনের নতুন-পুরোনো সাইকেল বিক্রি হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, এনজিওকর্মী ক্রেতার সংখ্যা বেশি।
নিজের নতুন মডেলের সাইকেলটি বিক্রি করতে এনেছে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম। বাড়ি নগরীর দর্শনা এলাকায়। বিক্রি প্রসঙ্গে জানায়, ১৩ হাজারে কিনেছি। কিন্তু স্কুলের বেতন বাকি পড়ায় এবং আর্থিক সমস্যার কারণে বিক্রি করে দেবো। আট হাজার হলে বিক্রি করবো, দাম উঠেছে ছয় হাজার।
পীরগাছা থেকে সাইকেল কিনতে এসেছেন এনজিওকর্মী আসমা বেগম। তিনি জানান, প্রতিদিন ৫ কিলোমিটার পথ যাতায়াত করতে হয়। তাই এই হাটে এসে সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে পুরোনো একটি সাইকেল কিনেছেন।
একইভাবে রংপুর সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা মতিয়ার রহমান জানান, তার একটি সাইকেল ছিল। সেটি চুরি হয়ে গেছে। বাসা থেকে তার দোকান চার কিলোমিটার দূরে হওয়ায় সাইকেল কিনতে এসেছেন। একটি ভালো সাইকেল পছন্দ হয়েছে। বিক্রেতা দাম চাইছেন ছয় হাজার। তার বাজেট তিন-চার হাজার। দামে না মেলায় এখনও কিনতে পারেননি।
কলেজশিক্ষার্থী ফারুক ফয়সাল বলেন, নতুন মডেলের পুরোনো একটি সাইকেল পছন্দ হয়েছে। আট হাজার দাম চাচ্ছেন বিক্রেতা। আরও কমানোর জন্য দামাদামি করছি। তবে এই মডেলের সাইকেল নতুন কিনতে ১২-১৫ হাজার টাকা দাম পড়বে।
লালবাগ হাটে বিভিন্ন পেশার মানুষ যেমন সাইকেল বিক্রি করতে আসেন, তেমনি হাটকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীও তৈরি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এই হাটে নতুন মডেল ছাড়াও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পুরোনো সাইকেল বিক্রি হয়। প্রতি হাটে পাঁচ-সাতশ সাইকেল ওঠে। ইজারাদারকে প্রতিটি সাইকেল বিক্রির জন্য ৩৫০ টাকা করে দিতে হয়। এটি অনেক বেশি বলে জানান তারা।
কারও কারও অভিযোগ, রংপুরসহ আশপাশের জেলায় চুরি যাওয়া সাইকেলগুলো এই হাটে বিক্রি হয়। সে কারণে অনেকে কম দামে কিনতে আসেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে সাইকেল বিক্রেতা ও হাট কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, যেকোনও পণ্য কেনার পর বিক্রি করতে গেলেই দাম কমে যায়। সে কারণে অনেকে এখানে সাইকেল কিনতে আসেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কাছে লালবাগ হাট এখন জনপ্রিয়।
এ ব্যাপারে হাটের ইজারাদার রবিউল ইসলাম মুন্না বলেন, রংপুর অঞ্চলের মধ্যে এত বড় সাইকেল হাট আর কোথাও নেই। সাইকেল বেচাকেনার সুবিধার্থে বিভিন্ন শেড করে দেওয়া হয়েছে। সাইকেল বিক্রি হলেই হাট থেকে একটি রসিদ দেওয়া হয়। এটাই সাইকেল কেনার প্রমাণণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে বিক্রির জন্য খাজনা বেশি নেওয়া হয় না।